অস্টেলিয়া ০৩:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চার ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৫০:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ২৯৬ Time View

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডজনখানেক ব্যাংকে সীমাহীন অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে। ফলে এসব ব্যাংকের আর্থিক সূচক দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে এই ব্যাংকগুলোর বোর্ড ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারক ও অভ্যন্তরীণ সুশাসনে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে কয়েকটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ নিয়ে সবচেয়ে চিন্তিত ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ব্যাংকটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর ছয় মাসে ৯ হাজার কোটি টাকার নিট আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খান।

তিনি আমার দেশকে বলেন, ইসলামী ব্যাংকের এখন কোনো সমস্যা নেই। রমজানে আমাদের সব সেবা চালু ছিল। গ্রাহক চাহিদামতো সব জায়গা থেকে টাকা তুলতে পেরেছেন। ঈদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আমাদের তারল্য সহায়তাও নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। যা সহায়তা নিয়েছি তা আগে।

এ ব্যাপারে ইউসিবি ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনোরকম সরকারি প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তা ছাড়াই ইউসিবির আর্থিক শৃঙ্খলা সুসংসহত। বর্তমানে দক্ষ নেতৃত্বের অধীনে ইউসিবি গ্রাহকদের আমানত অর্জন করে চলছে, যা তাদের দৃঢ় ভরসার প্রমাণ। ব্যাংকের ঋণ আদায় বৃদ্ধি, আর্থিক শাসনব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে তিন হাজার ৬৮২ কোটি টাকার নিট আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যার মাধ্যে ৭৫ শতাংশই ছিল সাধারণ মানুষের ছোট ছোট সঞ্চয়। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার রেকর্ডও গড়েছে ব্যাংকটি। তিন মাসে এক লাখ ৬৫ হাজার নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

শুধু ইসলামী ব্যাংক ও ইউসিবি নয়, এ তালিকায় রয়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন বোর্ড দেওয়ার পর তারা করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্বিতীয় প্রজন্মের এই শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটি একটি টেকসই উন্নয়নের ধারায় দ্রুত এগিয়ে চলেছে। একই সঙ্গে ব্যাংকটি প্রযুক্তিনির্ভর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নতুন নতুন অটোমেশন প্রযুক্তি সংযোজন করে চলেছে। এসব উদ্যোগে ব্যাংক পরিচালনায় গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গ্রাহকসেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

আরো বলা হয়েছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ব্যাংকিং সেক্টরের অস্থিরতার কোনো প্রভাবই এ ব্যাংকে পড়েনি। কর্পোরেট সুশাসন ও এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্টতার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সমসাময়িক অনেকগুলো সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের নাম। তবে ব্যাংকটির পরিসংখ্যান ও গ্রাহকসেবার বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্নকথা বলছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ছোট-বড় সব ধরনের গ্রাহকের সব লেনদেন চাহিদা সময়মতো পূরণ করেছে। সমসাময়িক ব্যাংকগুলো যেখানে গ্রাহকের চাহিদা পূরণে হিমশিম খেয়েছে, সেখানে এই ব্যাংক প্রতিনিয়ত সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরের চরম দুর্যোগ মুহূর্তেও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে একটিও চেক বাউন্স হয়নি। তারল্য সংকটে বড় বড় ব্যাংক যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে, সেখানে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক কোনো সুবিধা নেয়নি।

ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশজুড়ে ২২৬টি শাখা, ৮৬টি উপশাখা, ৭৫০টি এজেন্ট আউটলেট, ২৩০টি এটিএম বুথের বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ৯৪৫ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের মার্চে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৯ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা।

এদিকে এক্সিম ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে এবং আমানত উত্তোলনের চাপ কমে এসেছে। বর্তমানে ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহায়তার ওপর নির্ভর করছে না।

ব্যাংকের উপর গ্রাহকদের আস্থা ফিরে এসেছে এবং এক্সিম ব্যাংক পূর্ণমাত্রায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত ৩ মাসে ব্যাংকের নতুন আমানত এসেছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ।

Tag :
About Author Information

চার ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

Update Time : ০৩:৫০:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডজনখানেক ব্যাংকে সীমাহীন অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে। ফলে এসব ব্যাংকের আর্থিক সূচক দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে এই ব্যাংকগুলোর বোর্ড ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারক ও অভ্যন্তরীণ সুশাসনে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে কয়েকটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ নিয়ে সবচেয়ে চিন্তিত ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ব্যাংকটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর ছয় মাসে ৯ হাজার কোটি টাকার নিট আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খান।

তিনি আমার দেশকে বলেন, ইসলামী ব্যাংকের এখন কোনো সমস্যা নেই। রমজানে আমাদের সব সেবা চালু ছিল। গ্রাহক চাহিদামতো সব জায়গা থেকে টাকা তুলতে পেরেছেন। ঈদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আমাদের তারল্য সহায়তাও নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। যা সহায়তা নিয়েছি তা আগে।

এ ব্যাপারে ইউসিবি ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনোরকম সরকারি প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তা ছাড়াই ইউসিবির আর্থিক শৃঙ্খলা সুসংসহত। বর্তমানে দক্ষ নেতৃত্বের অধীনে ইউসিবি গ্রাহকদের আমানত অর্জন করে চলছে, যা তাদের দৃঢ় ভরসার প্রমাণ। ব্যাংকের ঋণ আদায় বৃদ্ধি, আর্থিক শাসনব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে তিন হাজার ৬৮২ কোটি টাকার নিট আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যার মাধ্যে ৭৫ শতাংশই ছিল সাধারণ মানুষের ছোট ছোট সঞ্চয়। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার রেকর্ডও গড়েছে ব্যাংকটি। তিন মাসে এক লাখ ৬৫ হাজার নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

শুধু ইসলামী ব্যাংক ও ইউসিবি নয়, এ তালিকায় রয়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন বোর্ড দেওয়ার পর তারা করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্বিতীয় প্রজন্মের এই শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটি একটি টেকসই উন্নয়নের ধারায় দ্রুত এগিয়ে চলেছে। একই সঙ্গে ব্যাংকটি প্রযুক্তিনির্ভর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নতুন নতুন অটোমেশন প্রযুক্তি সংযোজন করে চলেছে। এসব উদ্যোগে ব্যাংক পরিচালনায় গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গ্রাহকসেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

আরো বলা হয়েছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ব্যাংকিং সেক্টরের অস্থিরতার কোনো প্রভাবই এ ব্যাংকে পড়েনি। কর্পোরেট সুশাসন ও এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্টতার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সমসাময়িক অনেকগুলো সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের নাম। তবে ব্যাংকটির পরিসংখ্যান ও গ্রাহকসেবার বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্নকথা বলছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ছোট-বড় সব ধরনের গ্রাহকের সব লেনদেন চাহিদা সময়মতো পূরণ করেছে। সমসাময়িক ব্যাংকগুলো যেখানে গ্রাহকের চাহিদা পূরণে হিমশিম খেয়েছে, সেখানে এই ব্যাংক প্রতিনিয়ত সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরের চরম দুর্যোগ মুহূর্তেও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে একটিও চেক বাউন্স হয়নি। তারল্য সংকটে বড় বড় ব্যাংক যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে, সেখানে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক কোনো সুবিধা নেয়নি।

ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশজুড়ে ২২৬টি শাখা, ৮৬টি উপশাখা, ৭৫০টি এজেন্ট আউটলেট, ২৩০টি এটিএম বুথের বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ৯৪৫ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের মার্চে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৯ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা।

এদিকে এক্সিম ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে এবং আমানত উত্তোলনের চাপ কমে এসেছে। বর্তমানে ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহায়তার ওপর নির্ভর করছে না।

ব্যাংকের উপর গ্রাহকদের আস্থা ফিরে এসেছে এবং এক্সিম ব্যাংক পূর্ণমাত্রায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত ৩ মাসে ব্যাংকের নতুন আমানত এসেছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ।