অস্টেলিয়া ০২:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ :
বাংলাদেশি কর্মী নিতে আগ্রহী আলবেনিয়া বিশ্ববাঙালী সংসদ বাংলাদেশের নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে হাতপাখা মার্কার গণসংযোগ সাগর তলের বিস্ময় কক্সবাজারের রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড কলম্বাস ওহাইওতে ভ্রাম্যমাণ দূতাবাস সেবা সন্তুষ্ট প্রবাসী বাংলাদেশীরা সানোয়ার খান “ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৫” এ ভূষিত উপজেলা নির্বাহীর স্বাক্ষর জাল: কারাগারে বরগুনার গ্রন্থাগারিক হারুন কলম্বাস ওহাইওতে ভ্রাম্যমান দূতাবাস সেবা  ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত সৈয়দপুরে পোল্ট্রি গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্র উদ্বোধন ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত

উপজেলা নির্বাহীর স্বাক্ষর জাল: কারাগারে বরগুনার গ্রন্থাগারিক হারুন

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:২০:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৪১ Time View

বরগুনা প্রতিনিধি :
“অপরের জন্য গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়”— বহুল প্রচারিত এই প্রবাদটিই যেন সত্য হয়েছে বরগুনার প্রতারক মোশাররফ হোসেন হারুনের বেলায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অপরকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই এখন জেল হাজতে।

আজ ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল দশটায় এলাকাবাসী প্রতারক হারুনকে আটক করে বরগুনা সদর থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন। বিকেল তিনটার দিকে পুলিশ তাকে কোর্টে প্রেরণ করেন।

বরগুনা সদরের আয়লা কলেজের গ্রন্থাগারিক মোশাররফ হোসেন হারুন তার নিজ বাড়িতে ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া প্রতিবন্ধী (অটিজম) বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পলাতক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামীর নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বিগত সরকারের আমলে কেউই ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরে প্রতারণার শিকার সকল ভুক্তভোগী টাকা চাইলে তিনি উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন।

ওয়াজেদ মিয়া অটিজম বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য শাহ আলম হাওলাদার গরিব শিক্ষকদের থেকে নেয়া ঘুষের টাকা ফেরত দিতে বললে প্রতারক হারুন তার বিরুদ্ধে বরগুনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিয়া বরগুনা থেকে বদলি হলে প্রতারক হারুন সেই সুযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে জমা দেন। আসামি শাহ আলম হাওলাদার তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাইয়ের আবেদন করলে আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে স্বাক্ষর যাচাইয়ের জন্য পাঠালে এটি ভুয়া প্রমাণিত হয়। এরপর এই জালিয়াতির জন্য ফৌজদারী কার্যবিধিতে মামলা করতে আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে আমলি আদালত বরগুনা সদর এর বেঞ্চ সরকারি নাদিরা বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।

মামলার এজাহার হতে জানা যায়, আসামী মোঃ মোশারেফ হোসেন বাদী হয়ে মোঃ শাহ আলমকে আসামী করে বরগুনা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ০৯/১২/২০২৪ তারিখে একটি মামলা দায়ের করেন (সি.আর ১৭২০/২৪ (বর), ধারাঃ ৪০৬/৪২০ পেনাল কোড)। আদালত উক্ত মামলাটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরগুনাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

পরবর্তীতে মামলার ধার্য তারিখে ০৬/০২/২০২৫ ইং তারিখ সকাল ১০.৩০ ঘটিকায় মামলার নথি আদালতে উপস্থাপিত হয়। পরে ২৩/০৬/২০২৫ তারিখে জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান, বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরগুনা নথি পর্যালোচনা করে দেখতে পান যে জমাকৃত তদন্ত প্রতিবেদনটি সন্দেহজনক। এতে উল্লেখিত স্বাক্ষর যাচাই করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

১৩/০৩/২০২৫ তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা লিখিতভাবে জানান যে, সূত্র উপ/নি/বর-১১০-১৯-১-২৫ ইং “অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে আদালতে দাখিলকৃত গত ১৯/০১/২০২৫ তারিখের তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি অবগত নন। প্রতিবেদনে স্বাক্ষরটি তার নয় বরং জালিয়াতির মাধ্যমে স্বাক্ষর করা হয়েছে।”

এমতাবস্থায় আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, মামলার বাদী কিংবা তৃতীয় কোনো পক্ষ অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে আদালতে ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যা ফৌজদারী অপরাধ। এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বিধায় আদালত বেঞ্চ সহকারীকে নির্দেশ দেন বাদী ও অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করার জন্য।

আসামী মোঃ মোশাররফ হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে উপস্থাপন করেছেন। যা দণ্ডবিধি আইনের ৪৭১ ধারার আওতাভুক্ত অপরাধ।

প্রতারক মোশাররফ হোসেন হারুনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা সহ আরও বহু মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশি কর্মী নিতে আগ্রহী আলবেনিয়া

উপজেলা নির্বাহীর স্বাক্ষর জাল: কারাগারে বরগুনার গ্রন্থাগারিক হারুন

Update Time : ০৩:২০:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বরগুনা প্রতিনিধি :
“অপরের জন্য গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়”— বহুল প্রচারিত এই প্রবাদটিই যেন সত্য হয়েছে বরগুনার প্রতারক মোশাররফ হোসেন হারুনের বেলায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অপরকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই এখন জেল হাজতে।

আজ ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল দশটায় এলাকাবাসী প্রতারক হারুনকে আটক করে বরগুনা সদর থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন। বিকেল তিনটার দিকে পুলিশ তাকে কোর্টে প্রেরণ করেন।

বরগুনা সদরের আয়লা কলেজের গ্রন্থাগারিক মোশাররফ হোসেন হারুন তার নিজ বাড়িতে ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া প্রতিবন্ধী (অটিজম) বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পলাতক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামীর নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বিগত সরকারের আমলে কেউই ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরে প্রতারণার শিকার সকল ভুক্তভোগী টাকা চাইলে তিনি উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন।

ওয়াজেদ মিয়া অটিজম বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য শাহ আলম হাওলাদার গরিব শিক্ষকদের থেকে নেয়া ঘুষের টাকা ফেরত দিতে বললে প্রতারক হারুন তার বিরুদ্ধে বরগুনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিয়া বরগুনা থেকে বদলি হলে প্রতারক হারুন সেই সুযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে জমা দেন। আসামি শাহ আলম হাওলাদার তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাইয়ের আবেদন করলে আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে স্বাক্ষর যাচাইয়ের জন্য পাঠালে এটি ভুয়া প্রমাণিত হয়। এরপর এই জালিয়াতির জন্য ফৌজদারী কার্যবিধিতে মামলা করতে আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে আমলি আদালত বরগুনা সদর এর বেঞ্চ সরকারি নাদিরা বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।

মামলার এজাহার হতে জানা যায়, আসামী মোঃ মোশারেফ হোসেন বাদী হয়ে মোঃ শাহ আলমকে আসামী করে বরগুনা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ০৯/১২/২০২৪ তারিখে একটি মামলা দায়ের করেন (সি.আর ১৭২০/২৪ (বর), ধারাঃ ৪০৬/৪২০ পেনাল কোড)। আদালত উক্ত মামলাটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরগুনাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

পরবর্তীতে মামলার ধার্য তারিখে ০৬/০২/২০২৫ ইং তারিখ সকাল ১০.৩০ ঘটিকায় মামলার নথি আদালতে উপস্থাপিত হয়। পরে ২৩/০৬/২০২৫ তারিখে জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান, বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরগুনা নথি পর্যালোচনা করে দেখতে পান যে জমাকৃত তদন্ত প্রতিবেদনটি সন্দেহজনক। এতে উল্লেখিত স্বাক্ষর যাচাই করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

১৩/০৩/২০২৫ তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা লিখিতভাবে জানান যে, সূত্র উপ/নি/বর-১১০-১৯-১-২৫ ইং “অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে আদালতে দাখিলকৃত গত ১৯/০১/২০২৫ তারিখের তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি অবগত নন। প্রতিবেদনে স্বাক্ষরটি তার নয় বরং জালিয়াতির মাধ্যমে স্বাক্ষর করা হয়েছে।”

এমতাবস্থায় আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, মামলার বাদী কিংবা তৃতীয় কোনো পক্ষ অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে আদালতে ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যা ফৌজদারী অপরাধ। এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বিধায় আদালত বেঞ্চ সহকারীকে নির্দেশ দেন বাদী ও অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করার জন্য।

আসামী মোঃ মোশাররফ হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে উপস্থাপন করেছেন। যা দণ্ডবিধি আইনের ৪৭১ ধারার আওতাভুক্ত অপরাধ।

প্রতারক মোশাররফ হোসেন হারুনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা সহ আরও বহু মামলা বিচারাধীন রয়েছে।