অস্টেলিয়া ১১:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশী কোটায় হজ পালন

একটি দেশ থেকে কতজন মুসলিম নাগরিক হজে যেতে পারবেন তার একটি কোটা নির্ধারন করে দিয়েছে সৌদি সরকার। যা হল মুসলিম জনসংখ্যার প্রতি হাজারে একজন। চলতি বছরে বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা ছিল ১,২৭,১৯৮ জন। অন্যদিকে অস্ট্র্রে লিয়ার জন্য বরাদ্দকৃত কোটা হচ্ছে মাত্র ২,০৯০ জন। হজ প্যাকেজের উচ্চ মূল্যের কারণে এবারে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত কোটার ৪৪,০৪৩ টি স্থান খালি ছিল।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার জন্য নির্ধারিত ২০৯০ জনের কোটা ছিল নিতান্তই অপ্রতুল। এজন্য অর্থ এবং ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই অস্ট্রেলিয়া থেকে হজে যেতে পারেননি।
অস্ট্র্রে লিয়া থেকে সাধারণত বিভিন্ন হজ এজেন্সির মাধ্যমেই সবাই হজ করতে যেতেন। কিন্তু ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ সহ পশ্চিমা দেশগুলোর মুসলিমদের জন্য সৌদি সরকার অন-লাইন প্ল্যাটফর্ম “নুসুক” চালু করে। হজে যেতে ইচ্ছুক এসব দেশের মুসলিম নাগরিকদের এই নুসুক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিবন্ধন করে হজ প্যাকেজ কিনতে হয় এবং ফ্লাইট বুকিং দিতে হয়। প্রথমবার চালু করা এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায়, ২০২৩ সালে হজের প্যাকেজ বুকিং দিতে গিয়ে সবাইকে চরম অনিশ্চয়তা ও মানসিক চাপে ভুগতে হয়েছে। কোভিড পরবর্তী অত্যধিক চাহিদার কারণে নুসুক প্ল্যাটফর্মে হজ প্যাকেজ বুকিং করা রীতিমত চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল। নুসুক প্ল্যাটফর্মে কখন প্যাকেজ আসবে সেই অপেক্ষায় অনেককে ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত কম্পিউটার খুলে অনলাইনে বসে থাকতে হয়েছে। এছাড়া অধিকাংশ নুসুক হজ প্যাকেজের আকাশচুম্বী মূল্য অনেকের সাধ্যের বাইরে ছিল। তবে এ বছর (২০২৪) নুসুক প্ল্যাটফর্মের বেশ উন্নতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বছর আমার পরিচিত অনেকে বাংলাদেশী হজ কোটায় বাংলাদেশ হয়ে হজ পালন করে এসেছেন।
তাই নুসুক প্ল্যাটফর্মের অনিশ্চয়তায় না গিয়ে আমি বাংলাদেশী হজ কোটায় কিভাবে যাওয়া সে নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করি। তবে বাংলাদেশে না গিয়ে সরাসরি সিডনী থেকে হজে যাওয়া যায় কিনা তা অনুসন্ধান করার জন্য বেশ কয়েকটি বাংলাদেশী হজ এজেন্সির সাথে কথাও বলি। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের অভিজ্ঞতা না থাকায় এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাইনি। এরই মধ্যে জানতে পারি গত বছর চেীধুরী হজ কাফেলা নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে সিডনী ও অস্ট্র্রেলিয়ার অন্যান্য শহর থেকে অনেকে বাংলাদেশী হজ কোটায় অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি সৌদি আরবে গিয়ে হজ পালন করে এসছেন। তঁ াদের
পথ ধরে আমিও এ বছর ওই এজেন্সির মাধ্যমেই হজ সম্পন্ন করি।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ হজ কোটায় হজ ভিসা দেয়া হয় বাংলাদেশী পাসপোর্টে । অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে বর্হিগমনের সময় অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট দেখিয়েই আমাদের বের হতে হয়। তাই হজ যাত্রার সময় দুটি দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ ছিল। কারো মতে এটা কখনো সম্ভব নয়। তবে এবছর হজ পালন করে দেখলাম এটা নতুন কিছু নয়। দ্বৈত নাগরিকত্বধারী অনেকেই ভ্রমনের সময় দুটি দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন। বিমান বন্দরে চেক-ইন কাউন্টারের অধিকাংশ কর্মী দের এ বিষয়টি জানা থাকার কথা। তবে বোর্ডিং পাস ইস্যু করার সময় কাউন্টারের অফিসারকে ইতস্ততঃ করতে দেখলে অন্য
কাউন্টারের কোনো অফিসার কিংবা সুপারভাইসরের পরামর্শ নেয়া উচিত।

হজ করতে গেলে হাজীদের জিদ্দা বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশান করতে হয়। সিডনী কিংবা অস্ট্রেলিয়ার অন্য কোনো শহর থেকে জিদ্দা পর্যন্ত সরাসরি (Non-stop) কোনো ফ্লাইট নেই। তাই যাবার পথে অপনি কোন এয়ারলাইন্সের টিকিট কাটছেন তার উপর ভিত্তি করে একটি ট্রানসিট স্টপওভার নিতে হয়। যেমন ইত্তিহাদে টিকিট কাটলে আবুধাবী, আর কাতার এয়ারওয়েজে গেলে কাতারে ট্রানসিট নিতে হয়। অন্যদিকে হজ যাত্রার জন্য দুটো ভিন্ন এয়ারলাইন্সও ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন আমি মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সে করে কুয়ালালামপুর এবং কুয়ালালামপুর থেকে জিদ্দা সৌদিয়া এয়ারলাইন্সে করে যাই। মূল কথা হল, একটি দেশের ইমিগ্রশানে Entry ও Exit করার সময় একই পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হবে। Entry করার সময় এক পাসপোর্ট আর ঊীরঃ কবার সময় অন্য পাসপোর্ট ব্যবহার করলে স্বভাবতই ওই যাত্রীকে ইমিগ্রেশান অবৈধ বলে বিবেচিত করবে। অন্যদিকে এয়ারলাইন্স চেকইন কাউন্টার ইমিগ্রেশান থেকে ভিন্নভাবে কাজ করে। তারা বোর্ডিং পাস ইস্যু করার আগে দেখবে আপনার কাছে গন্তব্য দেশের ভিসা আছে কিনা।
অস্ট্রেলিয়ার যে শহর থেকে আপনি যাচ্ছেন সেখানকার বিমান বন্দরের চেক-ইন কাউন্টার থেকে বোর্ডি ং পাস নেবার সময় দুটো পাসপোর্ট (অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশী) এবং টিকিট দেখিয়ে বলতে হবে বাংলাদেশী পাসপোর্টে আপনার হজ ভিসা রয়েছে। তখন তারা অস্ট্রেলিয়া থেকে ট্রানসিট দেশ এবং ট্রানসিট দেশ থেকে জিদ্দা যাওয়ার জন্য দুটো বোর্ডিং পাস ইস্যু করবে। অস্টেলিয়ার ইমিগ্রেশানে অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হবে আর জিদ্দা ইমিগ্রেশানে ব্যবহার করতে হবে বাংলাদেশী পাসপোর্ট। নীচের লাইন ডায়াগ্রামের মাধ্যমে পুরো প্রμিয়াটি তুলে ধরা হল।

বাংলাদেশী হজ কোটায় হজে যাবার আগে করণীয় কাজগুলো নীচে বর্নিত হল:
১. পাসপোর্ট – বাংলাদেশী পাসপোর্ট থাকতে হবে।
২. প্রাক- নিবন্ধন – ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে আপনার এজেন্সির মাধ্যমে ফি জমা দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন করতে হবে।
৩. হজ প্যাকেজ – অধিকাংশ এজেন্সির ভিআইপি, এ, বি, সি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের প্যাকেজ থাকে। আর্থিক সামর্থ এবং প্যাকজে বর্নিত সুযোগ সুবিধা দেখে হজ প্যাকেজ নির্বাচন করতে হবে।
৪. বায়োমেট্রিক্স – মোবাইল ফোনে Saudi Visa Bio অ্যাপস ডাউনলোড করে বায়োমেট্রিকস সম্পন্ন করতে হবে।
৫. হজ ভিসা – ভিসার জন্য মূল বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেশে পাঠানোর দরকার নেই। এজেন্সির কাছে পাসপোর্টের প্রথম পাতার স্ক্যান কপি পাঠালেই চলবে।
৬. মেডিকেল সার্টিফিকেট – ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিস (Meningococcal A,C,Y,W-135) ভ্যাকসিন প্রদান। ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট বাংলাদেশের মন্ত্রণালয় থেকে নিতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার ক্লিনিক থেকে নিলে হবেনা। আমাদের এজেন্সি মন্ত্রণালয় থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট বের করে আনে। তবে নিজেদের সুরক্ষার জন্য হজে যাবার আগে আমরা অস্ট্রেলিয়াতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন নিয়ে নেই।
৭. আইডি কার্ড – সৌদি আরবে হোটেলে যাবার পর সৌদি মোয়াল্লেম প্রতিটি হাজীকে সৌদি হজ ও ওমরা মন্ত্রনালয়ের একটি নুসুক কার্ড দেবে। নুসুক কার্ডটি সার্বক্ষণিকভাবে সাথে রাখতে হয়। রাস্তায় বেরুলে পুলিশ চেক পয়েন্টে নুসুক কার্ড সাথে না থাকলে বিপাকে পড়তে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও একটি আইডি কার্ড দেয় হয় যা খুব একটা কাজে লাগেনি।

জিদ্দা বিমান বন্দরের পুরো ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে যা সতিই প্রশংসনীয়। আনুমানিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে ইমগ্রেশান হয়ে যায়। লাগেজও এসেছে তড়িৎ গতিতে। বাংলাদেশীদের সাথে বিমান বন্দরে দুর্ব্যবহারের কথা বহু শুনেছি। তাই একটু শঙ্কিত ছিলাম। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই দেখিনি।
ইমিগ্রেশান থেকে বের হবার পর আমাদের গ্রুপের কেবল একজনের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেখেই ছেড়ে দিল। বিমান বন্দরে নেমেই দেখলাম ইংরেজীতে পারদর্শী একঝাঁক তরুণ স্বেচ্ছাসেবকের দল যারা হাজীদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছিল। মক্কায় যে হোটেলে আমরা থাকবো তার নাম বলতেই সৌদি মোয়াল্লেম আমাদের জন্য নির্ধারিত একটি বাসে তুলে দিল। বাসে উঠেই দেখি রিফ্রেসমেন্ট – জুস, কেক ও বিস্কিটের প্যাকেট।
অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশী কোটায় হজে যাবার সময় ভিসা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাজগুলো সুসম্পন্ন করতে হলে একজন স্মার্র্ট হজ এজেন্সির প্রয়োজন। তাই সবার আগে সঠিক এজেন্সি নির্বাচন করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হজের প্যাকেজ নির্বাচন হজের ফরজ কাজ তিনটি (৩):
১. ইহরাম বাঁধা; ২. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা; ৩. তাওয়াফে জিয়ারত বা কাবা তাওয়াফ করা হজের ওয়াজিব কাজ ছয়টি (৬):
১. মুজদালিফায় নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করা
২. নির্দিষ্ট দিনে জামারাতে কংকর নিক্ষেপ করা
৩. হজের কুরবানি করা
৪. ইহরাম ত্যাগের জন্য মাথার চুল মুন্ডানো বা ছোটো করা
৫. তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ি তাওয়াফ করা
৬. সাফা মারওয়া সায়ি করা
জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই পাঁচ দিনে পাঁচ জায়গায় (১. মিনা ২. আরাফা ৩. মুজদালিফা ৪.
জামারাত ৫. বাইতুল্লাহ) নয় কাজ (৩ ফরজ+৬ ওয়াজিব) করাকে হজ বলে। হজের কার্যμমগুলো নীচের ছবিতে তুলে
ধরা হল।

হজ তিন প্রকার: ১. কিরান ২. তামাত্তু ও ৩. ইফরাদ। মক্কার বাইরে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা উপরোক্ত যে কোনো প্রকার
হজ করতে পারেন।
১. কিরান: মীকাত অতিμমের পূর্বে উমরা ও হজের ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে উমরাহ ও হজ উভয়টি সম্পন্ন করা। প্রথমে মক্কায় পৌঁছে উমরা করা। অতঃপর এই ইহরাম দ্বারা হজের সময়ে হজ করা ও কুরবানী দেয়া।

২. তামাত্তু হজ: মিকাত থেকে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কায় পৌঁছে উমরার কাজ সম্পন্ন করা ও পরে চুল কেটে বা চেঁছে ইহরাম মুক্ত হওয়া। অতঃপর এই সফরেই হজের ইহরাম বেঁধে হজের নির্ধারিত কাজগুলো সম্পন্ন করা এবং কুরবানী দেওয়া। আমরা তামাত্তু হজ করেছি।
৩. ইফরাদ: মিকাত থেকে শুধু হজের নিয়াতে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কায় পৌঁছে উমরা না করা বরং তাওয়াফ সেরে ইহরাম অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করা। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে হজের আমলগুলো সম্পন্ন করা। হজের যাবার আগে বৈষয়িক ও মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ হজ মন্ত্রনালয়ের সাথে প্রাক-নিবন্ধনের পর এ বছরের জানুয়ারীতেই আমার হজ কোটা নিশ্চিত হয়েছিল। যা আমাকে মানসিক স্বস্তি দিয়েছিল। ফলে আমি সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে পেরেছিলাম।
হজের যাবার আগে নিজের পছন্দনীয় একটি প্যাকেজ নির্বাচন করা খুব একটা সহজসাধ্য কাজ নয়। হজের কার্যক্রম
(Rites) সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় অনেক সময় হাজিরা সঠিক প্যাকেজ নির্বাচন করতে ব্যর্থ হন এবং পরে বিপাকে
পড়েন। এছাড়া অনেক এজেন্সি হজের প্যাকেজে বহু সুযোগ সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা দিতে ব্যর্থ হন। তাই
আগে ভাগে প্যাকেজের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে এজেন্সির সাথে কথা বলে নেয়া উচিত।
নুসুক প্ল্যাটফর্র্মে অবশ্য এজেন্সির সাথে আগে কথা বলার সুযোগ থাকনা। অনলাইনে বিস্তারিত পড়ে নিয়ে একটা ধারণা
করতে হয়। ভালো প্যাকেজগুলোর বেশী চাহিদা থাকে বলে সেগুলো খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়। তাই ইচ্ছে থাকলেও
নিজের পছন্দমত প্যাকেজ পাওয়া যায়না। এখন আমি যে বাংলাদেশী প্যাকেজে গিয়েছি তার বিভিন্ন দিকগুলো তুলে ধরার
চেষ্টা করব।
সাধারণত সুযোগ সুবিধার উপর নির্ভর করে হজ এজেন্সিগুলো বিভিন্ন ধরণের প্যাকেজ দিয়ে থাকে। যেমন -– ভিআইপি,
এ, বি, সি ইত্যাদি। মক্কা ও মদিনায় বায়তুল্লাহ ও মসজিদে নববী থেকে হোটেলের দুরত্ব, হোটল রুমে কয়জন থাকবে,
মিনা ক্যাম্পের মান, পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে প্যাকেজের মূল্য ও ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া অনেক এজেন্সি হাজীদের প্রথমে সরাসরি মদিনায় নিয়ে যায় এবং হজের আগে মক্কায় নিয়ে আসে। হজের মওসুমে
মক্কায় হোটেল ভাড়া মদিনার চেয়ে বহুগুনে চড়া হওয়ায় হাজীদের আগে মদিনায় রাখলে তাদের অর্থ সাশ্রয় হয়।
এবার মিনা ক্যাম্পের কথায় আসি। হজের সময় মিনায় তিন রাত থাকতে হয় তাই অনেকে মান সম্পন্ন মিনা ক্যাম্পে
থাকতে চান। মিনা ক্যাম্পে আরব দেশ, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলো সহ বিভিন্ন দেশের
হাজীদের জন্য নির্ধারিত এলাকা রয়েছে। সুযোগ-সুবিধার উপর ভিত্তি করে মিনার ক্যাম্পগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে ভাগ
করা হয়েছে:
Al Kabsh (VIP) – জামারাত থেকে ৩০০-৭০০ মিটার দুরত্বে অবস্থিত এই ক্যাম্পের প্রতি তাবুতে হাজীর সংখ্যা মাত্র
১০-২০জন। এতে রয়েছে সোফা বেড, বালিশ, লেপ, ও Split AC. রয়েছে সকালের নাস্তা, দুপর ও রাতের খবার (বিভিন্ন আইটেমের বুফে খাবার)।
Category A – জামারাত থেকে ৬০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত এই ক্যাম্পের প্রতি তাবুতে হাজীর সংখ্যা ১০-২০জন। অন্যান্য সুবিধাগুলো ভিআইপি ক্যাম্পের মত।
Al Muaisim – অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, তুরস্ক ও ইউরোপের হাজীদের এই ক্যাম্প রাখা হয়। জামারাত থেকে এর দুরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার। প্রতি তাবুতে হাজীর সংখ্যা ৫০-১০০ জন। বাকী সুবিধাগুলো ভিআইপি ও ‘এ’ ক্যাটাগরীর মাঝামাঝি। ঈধঃবমড়ৎু ই Category B- জামারাত থেকে দুরত্ব প্রায় ৫০০মিটার থেকে ১ কিলোমিটার। প্রতি তাবুতে হাজীর সংখ্যা ৩০-৫০
জন। এতে রয়েছে বালিশ, লেপ, ও Split AC. সকালের নাস্তা, দুপর ও রাতের খাবার (বুফে খাবার)

Category C – জামারাত থেকে দুরত্ব প্রায় ১-৩ কিলোমিটার। প্রতি তাবুতে হাজীর সংখ্যা ১০০ জনের বেশী। এতে
থাকবে ৫৫০ মিমি চওড়া ফোম ম্যাট্রেস, ছোটো বালিশ, চাদর ও এসি। মোয়াল্লেম সরবরাহকৃত তিন বেলার খাবার (বুফে
নাই)।
Category D – জামারাত থেকে দুরত্ব ৩ কিলোমিটারেরও বেশী। প্রতি তাবুতে হাজীর সংখ্যা ১০০- ১৫০ জন। ৫৫০ মিমি চওড়া ফোম ম্যাট্রেস, ছোটো বালিশ, চাদর ও এয়ারকুলার। মোয়াল্লেম সরবরাহকৃত তিন বেলার খাবার (বুফে নাই)।
চাইলে ক্যাম্প ক্যাটাগরী আপগ্রেড করা যায়। যেমন ক্যাটাগরি ডি থেকে এ-তে আপগ্রেড করতে কোনো কোনো এজেন্সি আড়াই লক্ষ টাকা অতিরিক্ত চার্জ করে। তবে আপগ্রেড করাটা খুব সহজ কাজ নয়। এটা সৌদি আরবের মোয়াল্লেমের সাহায্য নিয়ে করতে হয়। এছাড়া হাজীদের সাথে আপগ্রেডেড ক্যাম্পে এজেন্সির একজন প্রতিনিধিও দিতে হয়। তাই ভিআইপি প্যাকেজ না নিয়ে অন্য প্যাকেজ নিলে মিনা ক্যাম্প আপগ্রেড করতে এজেন্সি অনীহা প্রকাশ করে। এজন্য ইচ্ছে থাকলেও আমার মিনা ক্যাম্প আপগ্রেড করা সম্ভব হয়নি। তাই প্যাকেজ র্নিধারণ করার সময় মিনাতে কোন ক্যাটাগরি ক্যাম্পে রাখা হবে তা পরিস্কার জেনে নেয়া উচিত। মিনা ক্যম্পের একটা বিস্তারিত ম্যাপ দিলাম (ছবি দেখুন)। এবার আমাদের হজ প্যাকেজের সুযোগ-সুবিধাগুলোর বর্র্ণ না দিচ্ছি:
❖ প্যাকেজের সময়সীমা: বাংলাদেশী প্যাকেজগুলোর সময়সীমা ১৫ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তবে আমরা যারা অস্ট্রেলিয়া থেকে গিয়েছি তাঁদের অধিকাংশই ১৫ কিংবা ২১ দিনের প্যাকেজ নির্বাচন করি।
❖ মক্কার হোটেল:– জিদ্দা বিমানবন্দর থেকে আমাদের সরাসরি মক্কার হোটেলে নেয়া হয় এবং হজের পর আমরা মদিনায়
যাই। আমাদের হোটেল মসজিদুল হারাম থেকে ১০ মিনিট হাঁটার দূরত্বে কøক টাওয়ারে পেছরে মিসফালা এলাকায়, বিখ্যাত কবুতর চত্বরের সাথেই ছিল। মহিলা ও পুরুষদের আলাদাভাবে হোটেল রুমে চারজন করে রাখা হয়। তিনজন কিংবা স্বামী-স্ত্রী দুইজনও একজন রুমে থাকার অপশান রয়েছে। তবে এজন্য অতিরিক্ত ফি গুনতে হবে।

❖ পছন্দের প্যাকেজে হোটেল কেমন দিচ্ছে তা যাচাই করতে হলে হোটেলে কতটা স্টার রয়েছে তা না দেখে বরং
আপনার হোটেল হারাম শরীফের কতটা কাছে সেটাই আগে দেখা উচিত। হোটেল হারাম শরীফের যত কাছে হবে হারামে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ও তাওয়াফ করা ততটা সহজ হবে।
❖ আমাদের হোটেলের রেস্তোরাঁয় তিন বেলা বাংলাদেশী খাবার দেয়া হত। মাছ, মাংস, ডাল, শাক, বিরিয়ানীর স্বাদ যেনো এখনো মুখে লেগে আছে। মিসফালাকে বাঙালি পাড়া বললেই চলে। অধিকাংশ বাংলাদেশী হাজিরা এই এলাকার হোটেলে থাকেন। মিসফালার হোটেল থেকে বের হলেই চোখে পড়বে সারি সারি বাংলাদেশী ও পাকিস্তানী রেস্তোরাঁ।
❖ মদিনাতে আমাদের মান সম্মত হোটেলে রাখা হয় যা মসজিদে নববী থেকে মাত্র তিন মিনিট হাঁটার পথ। এখানেও
তিন বেলা বুফে খাবার সরবরাহ করা হত।
❖ মক্কা থেকে মিনা ক্যাম্প, মিনা থেকে আরাফাত, জামারাত থেকে মক্কা, মক্কা থেকে মদিনা, এবং ফিরে আসার সময়
মদিনা থেকে জিদ্দা বিমান বন্দর পর্যন্ত এজেন্সির পক্ষ থেকে বাস সার্ভিস ছিলো। মিনা থেকে জামারাত ট্রেনে করেও যাওয়া যায়। হাজিরা চাইলে হারামাইন হাই স্পিড ট্রেনে চড়ে মক্কা থেকে মদিনা কিংবা জিদ্দা বিমানবন্দরে যেতে পারেন। অন-লাইনে ট্রেনের টিকিট কাটা যায়। ট্রেনের টিকেট দ্রæত ফুরিয়ে যায় তাই আগে ভাগে টিকেট কাটা উচিত। উল্লেখ্য হারামাইন হাই স্পীড ট্রেনে বড় আকারের লাগেজ রাখারও সুব্যবস্থা রয়েছে।
❖ বাসে করে মক্কা ও মদিনার দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শনের ব্যবস্থা ছিল।
❖ মিনা ক্যাম্পে বাংলাদেশী হাজীদের সাধারনত ডি ক্যাটাগরী তাবুতে রাখা হয়। হাজীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মুজদালিফার কিছু অংশ মিনার মধ্যে অর্ন্তভ‚ক্ত করে নেয়া হয়েছে। এজন্য মিনা ক্যাম্পের ম্যাপে দেখা যায় অধিকাংশ বাংলাদেশী তাবু মিনার সীমানা ছাড়িয়ে মুজদালিফায় মধ্যে। আমাদের তাবুটাও ছিল মুজদালিফায়। এর সুবিধা হচ্ছে, আমাদের তাবুর মধ্যে রাত্রি যাপন করলেই মুজিদালিফায় থাকার শর্ত (ওয়াজিব) আদায় হয়ে যাবে। আমাদের তাবুর ৫০ মিটারের মধ্যেই ছিল কার্পেট বিছানো মুজদালিফায় রাত্রি যাপনের জায়গা। ওখানে জায়গা না পাওয়ায় পাশে রাস্তাতেই খোলা আকাশের নীচে আমরা রাত কাটাই। মুজদালিফায় জামারাতে মারার জন্য কংকর যোগাড় করতে হয়। তবে ইদানিং হজ গ্রæপের মোয়াল্লেমরাই ব্যাগে করে হাজীদের কংকর সরবরাহ করেন।

❖ আমাদের মিনা ক্যাম্পের তাবুতে প্রায় ১৫০জন হাজী ছিলেন। শোবার জন্য ছিল ৫৫০ মিমি চওড়া পাতলা ফোম ম্যাট্রেস। প্রচন্ড গরমের সময় এ ধরণের তাবুতে থাকা অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। কারণ অনেকসময় এয়ার কুলার কাজ করেনা, আর টয়লেটে থাকে লম্বা লাইন। এজন্য প্রচুর ধৈর্য ধারণ করতে হয় এবং সহনশীল হতে হয়। মিনার তাবুতে ঢুকে ভেতরটা দেখে প্রথমে চমকে উঠেছিলাম। তবে আলহামদুলিল্লাহ, মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হয়নি। আমি এটাকে হজের একটা পরীক্ষা বলেই ধরে নিয়েছিলাম। তাবুতে আশে পাশের লুঙ্গী ও গামছা গায়ে হাজীদের দেখে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর যে দেশেই থাকিনা কেন, আমিতো এঁদেরই একজন, এখানেইতো অমার শেকড়।
❖ ক্যাম্পে) খাবার পানির কোনো সমস্যা নেই। তাবুর বাইরে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ফ্রিজ ভর্তি পানির বোতল। ক্যাম্পের এক পাশে রয়েছে রান্না ঘর, যেখানে বিশাল বিশাল হাড়িতে বাংলাদেশী হাজীদের জন্য খাবার পাকানো হয়। তিন বেলা বক্সে করে তাবুতেই হাজীদের খাবার সরবরাহ করা হয়। এছাড়া তাবুর বাইরে বড় বড় ডিসপেন্সারে থাকে গরম চা। চায়ের জন্য দেখলাম লম্বা লাইন। একবার দেখি খাওয়া দাওয়া শেষে পর এক হাজী পানের ডিব্বা খুলে বসেছেন। চাইলে আমাকেও একটু ভাগ দিলেন।
❖ ক্যম্পে ঝয়ঁধঃ ্ ঈড়সসড়ফব দু’ধরণেরই টয়লেট রয়েছে। টয়লেটগুলো নতুন এবং বেশ পরিচ্ছন্ন। নিয়মিতভাবে
পরিস্কার করা হচ্ছে। যেমনটা আগে ভেবেছিলাম সেরকম নয়।
❖ আরাফাতের ক্যাম্প আরেকটু উন্নত মনে হল, তাতে ঝঢ়ষরঃ অঈ ছিল। এখানেও বাংলাদেশী খাবারের ছিল।
❖ হজের পর কুরবানীর ব্যবস্থাও এজেন্সি করে দেয়। কুরবানীর জন্য জন প্রতি আমরা ৭০০ রিয়াল করে দিয়েছি। তবে
সরকারী মূল্য হচ্ছে প্রতি ভাগ ৭২০ রিয়াল। এই টাকা নিজে যে কোনো স্থানীয় ব্যাংকে কুরাবানীর জন্য জমা দেয়া যায়। কুরবানী দেয়া হলে কর্তৃপক্ষ আপনার ফোনে ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দেবে।
❖ মদিনায় রিয়াদুল জান্নায় জিয়ারতের গ্রæপ বুকিংও এজেন্সির পক্ষ থকে দেয়া হয়। অবশ্য গ্রæপ বুকিং-এর জন্য বসে
না থেকে ফোনে নুসুকের অ্যাপস নামিয়ে নিজেও বুকিং দেয়া য়ায়। তবে সেটা দেরী না করে বুকিং দেয়া উচিত নাহলে পরে ¯øট পাওয়া মুশকিল ।

হজের প্রস্তুতি
হজে যাবার সময় সাথে কি ধরণের জিনিসপত্র নিতে হয় তা নিয়ে এখন লিখবো। অবশ্য এ নিয়ে অন-লাইনে, ইউটিউব ভিডিওতে প্রচুর তথ্য রয়েছে। একটু রিসার্চ করলেই বিস্তারিত জানা যায়। QURAN- তাফসির সহ কুরআন এবং অন্যান্য ধর্মীয় বই ।

IHRAM & IHRAM BELT জিদ্দা বিমান বন্দরে অবতরণের আগে মিকাতের সীমানা পার হতে হয় বলে বিমানে কিংবা ট্রানসিট বিমানবন্দরে ইহরাম পরিধান করে নিতে হয়। তাই অস্ট্রেলিয়া ছাড়ার আগে হ্যান্ড লাজেগে এক সেট ইহরামের কাপড় রাখতে হয়। আমি সিডনীর Auburn এলাকা থেকে ইহরামের কাপড় ও বেল্ট কিনেছিলাম। লক্ষ্য রাখতে হবে ইহরামের কাপড় যাতে খুব মোটা না হয় তাহলে গরমে খুব অস্বস্তিকর হতে পারে। দুই সেট ইহরামের কাপড় থাকলে ভালো। একটি কোনো কারণে ময়লা হয়ে গলে যাতে অন্যটি পরিধান করা যায়। তবে ২য় ইহরামের সেট মক্কা থেকে কেনা উচিত। মক্কায় হোটেলের আশে পাশের যে কোনো দোকানে ৩০ রিয়ালের মধ্যে ইহরামের সেট পাওয়া যায়।তাওয়াফ করার সময় ইহরাম বেল্টে মোবাইল ফোন, টাকা ও ব্যাংক কার্ড রাখার জন্য খুব কাজে দিয়েছিল।

TOILETERIES
সত্যি বলতে কি প্রচুর রিসার্চ করে সাথে বহু কিছু নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তার অনেক কিছুই ব্যবহার করার সুযোগ হয়নি। তবে compressed tissue, door hook, wet wipes এবং ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধহীন সাবান কাজে লেগেছে।
গরম থেকে সুরক্ষার জন্য দরকার হাইড্রালাই (ট্যাবলেট/তরল), ছাতা, সানগøাস, ও যদি সম্ভব হয় Portable misting fan. হোটল থেকে বেরুলেই আমরা নিয়মিত হাইড্রলাইট মিশ্রিত পানি পান করতাম। হজের সময় যখন দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে হয়েছে
তখন একটি ফেস টাওয়েল ঠান্ডা পানি দিয়ে ভিজিয়ে মুখ মুছে নিতাম যা স্বস্তি এনে দিতো। মিনা ক্যাম্পে ও হাঁটার সময় Portable misting fan খুব কাজে দেয়। মক্কার হোটেলে যাবার পর পরই সৌদি মোয়াল্লেম একটি করে সাদা রংয়ের ছাতা
দিয়েছিল কিন্তু তা খোলার আগেই দেখি ভেঙ্গে গেল । ছাতা এখান থেকে না নিয়ে মক্কার দোকান থেকে কেনা যায়, দাম মাত্র ১০ রিয়াল। আনেক সময় ছাতা হারিয়ে যায় কিংবা ভেঙ্গে যায়। তাই হজের পুরো সময়টাতে কয়েকটি ছাতার প্রয়োজন হতে পারে।

MEDICATION
আমরা যে সব ওষুধ নিয়মিত যেবন করি সেগুলো ছাড়া যেগুলো সাথে করে নেয়া উচিত: Paracetamol
/Ibuprofen, Cold & Flue, Loperamide (diarrhoea), common anti-biotics, band aid, antiseptic cream, anti-rash cream ইত্যাদি। আসলে কোন ওষুধ কখন কাজে লাগবে তা বলা মুশকিল। যেহেতু অসুস্থ হয়ে পড়লে অনেক সময় ক্লিনিক কিংবা ডাক্তারের কাছে যাবার সময় থাকেনা তাই উপরের ওষুধগুলো হাতের কাছে থাকলে ভাল হয়।

হজের সময় মসজিদুল হারামে যাওয়া ও তাওয়াফ করার জন্য প্রতিদিনই প্রচুর হাঁটতে হয়। পায়ের ব্যথা দূর করার জন্য আমি নিয়মিত প্যারাসিটামল খেতাম। মক্কায় কোনো রকমের ঠান্ডা পানীয় স্পর্শ না করার পরও মিনায় যাবার পর থেকে আমার জ¦র, গলা ব্যথা ও কাশি শুরু হয়। যা এখনো সারেনি। আমি সাথে করে করে এন্টিবায়োটিক্স নেইনি। তবে একজন হজের সাথী থেকে এন্টিবায়োটিক্স ক্যাপসুল ধার নিয়ে খাওয়ার পর কিছুুটা সুস্থ হই।
প্রচন্ড গরম ও ঘামে অনেকের র‌্যাশ হয়। বাজারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে 3B Action Cream টি সেরা। এটি Coles কিংবা যে কোনো ফার্মেসীতে পাওয়া যায়।
তাওয়াফ ও চলাফেরা করার সময় অনেককে পায়ে আঘাত পেতে দেখেছি। আমার নিজেরই বাথরুমের দরজার লেগে পায়ের বুড়ো আঙ্গুলটি কেটে যায়। এজন্য ব্যান্ড এইড ও এন্টিসেপটিক μিমের প্রয়োজন।
মক্কার মিসফালাতেই রয়েছে বাংলাদেশ হজ মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল ক্লিনিক। ক্লিনিকে রয়েছে ৮-১০ জন চৌকস ডাক্তার আর ফার্মেসী। ফার্মেসী থেকে বিনামূল্যে হাজীদের ওষুধ দেয়া হয়। কিøনিকের পুরো ব্যবস্থাপনা সত্যিই প্রশংসনীয়। মক্কায় যাবার দু’দিনের মাথায় অসুস্থবোধ করলে আমি বাংলাদেশ ক্লিনিকে যাই। রিসেপশানে গিয়ে বাংলাদেশী আইডি কার্ড দেখাতেই আমাকে একটি টিকিট দেয়া হল। রোগীর সংখ্যা বহু হলেও সবাইকে সুশৃংখলভাবে লাইনে দাঁড়াতে দেখলাম। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ডাক্তারের কাছ থেকে প্রেসμিপশান নিয়ে ফার্মেসী থেকে ওষুধ পেয়ে গেলাম। এজন্য বাংলাদেশ হজ মন্ত্রণালয়কে সাধুবাদ জানাতেই হয়।
THINGS FOR HAJJ DAY
মিনা/আরাফাত/মুজদালিফার জন্য একটি মাঝারি সাইজের স্কুল ইধপশঢ়ধপশই যথেষ্ট (গরহস ৪০খ)। মিনা ক্যাম্পে খুবই অল্প জিনিসপত্র নেয়া উচিত। অনেকে মিনায় বড় আকারের ট্রলি ব্যাগ নিয়ে যান । বেকপ্যাক থাকলে ওটা পিঠে ঝুলিয়ে
সরাসরি জামারাতে কংকর মারতে যাওয়া যায়। কিন্তু বড় ট্রলি ব্যাগ নিয়ে জামারাতে যাওয়া যায়না। তাই মিনায় বড় ট্রলি ব্যাগ নেয়াটা ঠিক নয়।
মসজিদুল হারামে দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যাওয়া ও তাওয়াফ করার সময় জায়নামাজ, ছাতা, পনির বোতল ও পায়ের স্যান্ডেল ইত্যাদি রাখার জন্য স্ট্রিং ব্যাগ অপরিহার্য্য(ছবি)। জিদ্দা এয়ারপার্টে নামার পর সৌদি মোয়াল্লেম বাংলাদেশী পাসপোর্ট জমা নিয়ে নেয়। অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট হোটেলের সুটকেসে তালা মেরে রাখলেই চলে। হোটেল কক্ষ বেশ নিরাপদ মনে হয়েছে। এছাড়া মূল্যবান জিনিসপত্র রাখার জন্য হোটেল রুমে সেফও রয়েছে। Foldable Prayer Mat with Backrest – মসজিদুল হারামের ভেতর পছন্দমত জায়গা পেতে হলে নামাজের দু’এক ঘন্টা আগে যেতে হয়। অনেক সময় আছর নামাজ পড়তে গেলে ইশার নামাজ শেষ করে তবেই হোটেলে ফেরা হয়। কোমর ব্যথার কারণে দীর্ঘক্ষন মাটিতে বসে থাকা আমার জন্য খুবই কষ্টকর। তাই এই ম্যাটটি আমার খুবই কাজে লেগেছে। এটা মক্কার যে কোনো দোকানে ২০/২৫ রিয়ালে কিনতে পাওয়া যায়। অনেকে অবশ্য ছোট ফোল্ডিং চেয়ারও নিয়ে যান। যারা কোমর কিংবা পিঠের ব্যথায় ভুগছেন তাদের জন্য এই ধরনের ম্যাটটি খুবই উপকারী। অবশ্য মদিনায় মসজিদ-এ-নববীতে কর্তৃপক্ষ মসজিদের বিভিন্ন স্থানে বসার জন্য সারি সারি ফোল্ডিং চেয়ার ঝুলিয়ে রাখেন

MONEY
অস্ট্রেলিয়া থেকে যাবার সময় বেশ কিছু ক্যাশ রিয়াল (৪,০০০) সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম। কেনা কাটা, বাইরে খাওয়া দাওয়া ইত্যাদির জন্য ব্যাংক কার্ডের চেয়ে ক্যাশ ব্যবহার করাটাই শ্রেয়। μেডিট কার্ড ব্যবহার করলে ২.৫% সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। আমি সাথে WISE International Debit Card নিয়ে গিয়েছিলাম। এটা দিয়ে বিশে^র যে কোনো দেশে ATM বুথ থেকে স্থানীয় কারেন্সি তোলা যায় এবং কেনাকাটাতে ডেবিট কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা যায়। ওয়াইজ কার্ডের কনভারসন রেট মানি এক্সচেঞ্জের চেয়ে ভালো (1A$=2.47 Riyal). ১০ ডলার দিয়ে অনলাইনে ওয়াইজ কার্ড অর্ডার করতে হয়। প্রয়োজনমত মূল ব্যাংক একাউন্ট থেকে ডলার পাঠিয়ে ওয়াইজ একাউন্ট টপ-আপ করলেই হয়।

MAT & AIR PILLOW মুুজদালিফায় রাত্রি যাপনের জন্য ম্যাট ও বালিশ মক্কার যে কোনো দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। একটা চাদর এবং AIR PILLOW নেয়া যেতে পারে। চাদরটা মিনা ক্যাম্পে গায়ে দেয়ার জন্যও কাজে লাগে।

SIM Card মক্কার হোটেলে লাগেজ রেখে প্রথম কাজ হচ্ছে মোবাইল ফোনের জন্য একটি সিম কার্ড কেনা। জিদ্দা বিমান বন্দরে সিম কার্ড কেনার সময় থাকেনা। হোটেলের আশে পাশে রাস্তার উপর রয়েছে বিভিন্ন ফোন কোম্পানীর SIM Card
Kiosk. তিনটি বহুল প্রচলিত সিম কার্ড হচ্ছে – STC (Saudi Telecom), Mobily and Zain. তবে নেটওয়ার্ক কাভারেজের বিবেচনায় STC ই সেরা। STC’র সাওয়া ডাটা প্যাকেজটি বেশ জনপ্রিয়।

MISCELLENEOUS

Waist or shoulder bag? বিমান ও বাসে চলাচলের সময় টাকা, পাসপোর্ট ও অন্যান্য জরুরী জিনিসপত্র বহন করার জন্য Waist ব্যাগের চেয়ে shoulder ব্যাগ আমার কাছে অনেক বেশী কার্যকর মনে হয়েছে।
Digital scale- লাগেজ ওজন করার জন্য ডিজিটাল স্কেল কাজে লাগে।
Footware –)আমি দুই ধরনের (Thong & Non Slip
Outdoor) স্যান্ডেল নিয়ে গিয়েছিলাম।
Portable Power Bank– হজের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে ফোনে চার্জ দিতে পাওয়ার ব্যাংকের প্রয়োজন হয়। 10000 MAh capacity পাওয়ার ব্যাংক হলেই চলে। মিনা ক্যাম্পের তাবুতে চার্জ দেয়ার জন্য সীমিত সংখ্যক পাওয়ার পয়েন্ট
রয়েছে। অনেকেই মাল্টিপল পাওয়ার বোর্ড নিয়ে যায় এবং ওখান থেকে ফোনে চাজর্ দেয়া যায়। তবে সাথে একটা কনভার্টার প্লাগ নিয়ে যাওয়া উচিত যা হোটেল
রুমেও কাজে লাগে। Dry Foods –)অস্ট্রেলিয়া থেকে খাবার খুব একটা নেয়ার দরকার নেই। প্রয়োজন হলে স্থানীয় সুপার মার্কেট ইরহ) Bin)
Dawood থেকে কেনা যায়। কিছু muesli bar নেয়া যেতে পারে।
উপরে বর্নিত অধিকাংশ জিনিসপত্র অনলাইনে কেনা যায়। Amazon কিংবা e-Bayতে দাম একটু চড়া তাই আমি Temuথেকেই কিনেছিলাম। কোনো সমস্যা হয়নি

GIFTS & ZAMZAM WATER

দেশে ফেরার পথে সবাই পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্য উপহার
কিনে থাকেন। কেনাকাটা মক্কাতেই করা উচিত। যদিও অনেকে বলেন মদিনায় জিনিসপত্র সস্তা। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম তা সঠিক নয়। মক্কায় কাপড়-চোপড়, বোরকার যেvariety তা মদিনায় খুঁজে পাওয়া যায়না। মক্কায় বেচাকেনা অনেক
বেশী হয় বলে জিনিসপত্রের দামও মদিনার চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম। তবে খেজুর মদিনা থেকেই কেনা উচিত।
জিদ্দা বিমান বন্দরে প্রত্যেক হাজি ১২ রিয়ালের বিনিময়ে ৫ লিটারের একটি জমজম পানির বোতল কিনতে পারেন। জমজমের বোতল লাগেজের সাথে বিনামূল্যে আনা যায়। খেজুর নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশানে তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। ওরা হজের ব্যাপারে জানে। তাই ডিক্লেয়ার করলে তেমন একটা দেখতেও চায়না। খোলা খেজুু রও আনা যায় তবে সেটা প্লাস্টিক ব্যাগে সিল করে আনলে ভালো।

এবার হজে কেনো এত মানুষ মারা গেল? জুন থেকে সেপ্টেম্বর, এই চার মাস হল সৌদি আরবের গ্রীষ্মকাল। বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় গড় তাপমাত্রা এই চার মাসেই সবচেয়ে বেশী (ছবি দেখুন)। জুন মাসের গড় তাপমাত্রা ২৯-৪৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস দেখালেও দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কখনো ৫০ ডিগ্রী অতিμম করে যায়। সমস্যা হল রাতের বেলাতেও তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রীর নীচে নামেনা ইসলামিক ক্যালেন্ডার চান্দ্র মাস অনুযায়ী হয় বলে হজের তারিখ গ্রেগরীয় বা ইংরেজী বছরের তুলনায় ১১ দিন ছোট
হয়। ফলে ইংরেজী ক্যালেন্ডারে হজের তারিখ প্রতি বছর পরিবর্তন হয়। সেই হিসাবে আগামী ৪ বছরের মধ্যে হজ পিছিয়ে গিয়ে এপ্রিল মাসে পড়বে। তখন হাজীদের এখনকার মত প্রচন্ড গরমের মধ্যে হজ করতে হবেনা। এতএব আগামী কয়েক বছরে যারা হজে যাবেন তাদের হিটস্ট্রোক থেকে সুরক্ষিত থাকার বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। প্রতি বছর ১১ দিন করে পিছিয়ে গিয়ে আনুমানিক ২০৫২ এবং ২০৮০ সালে আবারো হজ গ্রীষ্মকালে ফিরে আসবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে বৈশ্বিক উষ্ণতা ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য হজের সময় হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি পাঁচ গুন বেড়ে যাবে। তার মানে ভবিষ্যতে হজ করতে গিয়ে হাজীদের আরো বেশী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
অতীতে হজের মওশুমে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় বহু হাজীর প্রানহানি ঘটেছে। ১৯৯০ সালে ভীড়ের মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে সৌদি সরকারের হিসাব অনুযায়ী ১৪৬২ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পদদলিত হয়ে ৭৬৮ জনের মৃত্যু হয়। এর মাত্র দুু’সপ্তাহ আগে ১১ই সেপ্টেম্বর একটি ভ্রাম্যমান μেন ভেঙে পড়ে মসজিদুল হারামের কাছে ১১৮ জনের মৃত্যু হয়। আর এবছর প্রচন্ড গরমের কবলে পড়ে প্রায় ১৩০০ হাজীর মৃত্যু হয়েছে। তবে যে সব হাজী নিখাঁজ রয়েছে তাঁদের এই সংখ্যায় ধরা হয়নি। বেসরকারী হিসাবে এছরের মৃতের সংখ্যা সৌদি সরকারের হিসাব থেকে অনেক বেশী।
সরকারী ভাষ্য অনুযায়ী এবার যে সব হাজী মারা গিয়েছেন তাদের ৮৫% শতাংশ হলেন অনিবন্ধিত হজ যাত্রী অর্থাৎ
যারা অবৈধ উপায়ে হজে যোগ দিয়েছিলেন। হজের খরচ অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ও বয়সের কারণে অনেকে অবৈধ
উপায়ে হজ করার চেষ্টা করেন। অনেক অসৎ এজেন্সি মানুষকে মক্কায় আসলে হজ পারমিটের ব্যবস্থা করে দেবে বলে
প্রতিশ্রæতি দিয়ে হাজীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়। কিন্তু পরে তাদের আর দেখা মেলেনা।
অবৈধভাবে হজ করা বন্ধ করার জন্য জিলক্কদ ও জিলহজ এই দুই মাস যেসব বিদেশীরা ভিজিট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে যান তাদের জিদ্দা বিমান বন্দরে নামতে দেয়া হয়না। তারা কেবল মদিনা, রিয়াদ ও দাম্মামে যেতে পারেন।
তবে অনেকে হজের আগে ভিসিট ভিসা নিয়ে অন্য শহরে এসে হজের সময় বিভিন্ন পথ ধরে হজ স্থলে পৌছান। হজ পারমিট না থাকায় তাঁরা কোথাও নিবন্ধিত হতে পারেন না। এই ধরণের হজযাত্রীরা মিনা, মুজদালিফা কিংবা আরাফাতের কোথাও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু, খাবার ও পরিবহন সংμান্ত কোনো সুযোগ সুবিধা পাননা। কোনো প্রকারে মক্কায় পৌছানোর পর তাঁরা সেখানে খাওয়া-দাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করে নেন।

মিনা কিংবা আরাফাতের তাঁবু র ভেতরে কতজন হাজী থাকবেন তা আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। নিবন্ধিত হাজী নাহলে আরাফাত কিংবা মিনার তাঁবুতে প্রবেশাধিকার নাই। তবে অনেকে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও পরিচিতির কারণে তাঁবুতে জায়গা করে নেন।
আরব দেশের বহু মানুষ যাদের সামর্থ নাই তাঁরা অবৈধ উপায়ে হজ করতে আসেন। ভাষা ও কৃষ্টিগত মিল থাকায় অন্যান্য আরব দেশের নাগরিকরা খুব সহজেই স্থানীয় নাগরিকদের সাথে মিশে যেতে পারেন। উল্লেখ্য এবারে হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়া মৃত হাজীদের ৪৬ শতাংশই ছিলেন আরব দেশ মিসরের নাগরিক। এইসব হাজিদের অনেকেরই হজ পারমিট ছিলনা। ফলে তাঁরা হাজিদের জন্য নির্ধারিত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন।

অবৈধ উপায়ে হজ বন্ধ করার জন্য সৌদি সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ২০ লক্ষ মানুষের মধ্যে পারমিটবিহীন হাজীদের খুঁজে বের করা দু:সাধ্য কাজই বটে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি নিবন্ধিত হাজীকে ‘নুসুক’ আইডি কার্ড দেয়া হয় যা দেখে বৈধ হাজীদের সনাক্ত করা যায়। মক্কায় অবস্থানকালে অনেকবার রাস্তাঘাটে আমাদের নুসুক কার্ড চেক করা হয়েছে। এছাড়া জিদ্দা থেকে বাসে করে মক্কা ঢোকার সময় অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করার লক্ষ্যে হাজীদের বাস থামিয়ে কয়েকবার ব্যাপক চেক করা হয়। বিভিন্ন আবাসিক ভবনেও অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের উচ্ছেদ করে দেশে পাঠানো হয়। সৌদি নাগরিক যাদের হজ করার অনুমতি নাই তারা নিয়ম ভঙ্গ করলে জরিমানা করা হয় এবং বিদেশীদের জন্য পরবর্তী ১০ বছরে বা আজীবন সৌদি প্রবেশ নিষিদ্ধ করার বিধান রয়েছে। বৈধ হজ পারমিট ছাড়া হজ করা শরিয়ত মোতাবেক জায়েজ নয় জানা থাকার পরও মানুষকে অবৈধ উপায়ে হজ করা থেকে বিরত করা যাচ্ছেনা।
এবারের হজে প্রতিক‚ল আবহাওয়ার কারণে জিলহজ মাসের ১০ তারিখ অর্থাৎ কুরবানীর দিন বেশী হাজীর মৃত্যু হয়। এ সময় তাপমাত্রা ৫১.৮ ডিগ্রীতে উঠে যায় যা হাজীদের কাবু করে ফেলে। মুজদালিফা থেকে জামারাত, জামারাত থেকে মিনার পথে মৃত্যুর বিভীষিকা ছড়িয়ে পড়েছিল। মিনা ও আরাফাত ক্যাম্পে পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ থাকলেও মুজদালিফা থেকে জামারাত এবং জামারাত থেকে মিনায় ফেরার পথে পানির অভাব ছিল। ফলে সূর্যতাপ ও গরমের মধ্যে যথেষ্ট বিশ্রাম ছাড়া দীর্ঘ পথ হেঁটে মিনায় যাবার পথেই বেশীরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তবে ওই দিন যারা মিনায় না গিয়ে মক্কায় গেছেন তাঁরা বেঁচে যান। আমাদের মুয়াল্লেম ১০ই জিলহজ বড় শয়তানের প্রতিকী স্তম্ভে কংকর নিক্ষেপ করে আমদের মক্কার হোটেলে নিয়ে যান এবং আবার রাতে মিনা ক্যাম্পে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এ নিয়ে প্রথমে একটু মনক্ষুন্ন হলেও আমাদের মুয়াল্লেমের সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল তা পরে বুঝতে পারি।
আরাফাত থেকে মুজদালিফার দূরত্ব হচ্ছে আনুমানিক ৮ কিলোমিটার আর মুজদালিফা থেকে মিনার দুরত্ব হচ্ছে ৫ কিলোমাটার। অন্যদিকে মিনা থেকে জামারাতের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। মিনা ক্যাম্প ও মুজদালিফায় একজন
হাজীর তাঁবুর অবস্থানের উপর এই দুরত্ব কম-বেশী হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর তুলনামূলক অবস্থান বুঝার জন্য
একটি ম্যাপ দিলাম।
ম্যাপ থেকে দেখা যায়, আরাফাত থেকে মুজদালিফা কিংবা মিনা যাবার জন্য পরিবহন না থাকলে হাজীদের প্রচন্ড গরমের মধ্যে ১০-১৩ কিলোমিটার অতিরিক্ত হাঁটতে হয়। হায়াদ্রাবাদের এক হাজী জানালেন তিনি প্রায় ৪০ কিলোমিটার হেঁটেছেন। আমার মোবাইলে ফোনের স্টেপ কাউন্টারে দেখলাম ওই দিন আমাকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে। আরাফাত থেকে মিনা ক্যাম্প পর্যন্ত বাস সার্ভিস থাকায় আমাদের তুলনামূলকভাবে কম হাঁটতে হয়েছে।

আরাফাতে অবস্থানের পর দিন মুজদালিফা থেকে ফজরের নামাজের শেষে প্রতিকী শয়তানের স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপের জন্য হাজীরা জামারাতের দিকে যাত্রা শুরু করে। দিনের আলো ফুটে উঠে যখন গরম পড়তে শুরু করে তখন হাজীরা খাবার জন্য পানি পাননি এবং রাস্তায় ছিলনা কোনা ছায়া। রাস্তার আশে পাশে কিছু ধিঃবৎ শরড়ংশ থাকলেও তাতে পানি সরবারাহ ছিলনা। পথে সময় সময় হাজীদের উপর পানি স্প্রে করা হলেও তা গরম কাটাতে সাহায্য করেনি। জামারাতে অনেক হাজীদের ৩ কিংবা ৪ তলাতে উঠিয়ে দেয়া হয়। এই পথে হাজীদের পাহাড় বাইতে হয়েছে এবং জামারাতের যাবার রাস্তাও ছিল অনেক দীর্ঘ। ফলে অনেক হাজী ভয়াবহ কষ্টের মধ্যে পড়েন। জামারাতে কংকর নিক্ষেপের তৃতীয় দিন আমাদের তিন তলায় তুলে দেয়া হলে এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী ক্লান্তি ও অবসাদে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে আমাদের কাছে হাইড্রালাইট ও পর্যাপ্ত পরিমানে পানি ছিল বলে সে যাত্রায় আমরা কংকর নিক্ষেপ সম্পন্ন করতে সমর্থ হই। আমাদের ক্যাম্পে প্রত্যক্ষদর্শী হাজীদের কাছে শুনেছি পানির অভাবে হাজীদের কষ্টের কথা। তারা দেখেছেন রাস্তার পাশে ফুটপাতে অসংখ্য হাজীদের অজ্ঞান হয়ে ও মৃত পড়ে থাকতে।
হজের সময় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভীড় নিয়ন্ত্রনের কৌশল দেখে অবাক হয়েছি। কাউকে কোনো অবস্থায় রাস্তায় থামতে দেয়া হচ্ছিলনা। মানুষ যখন অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছিল তখন অনুনয় বিনয় করার পরও তাদের কোথাও বিশ্রাম নিতে দিচ্ছিলনা পুলিশ। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ হঠাৎ করে ব্যরিকেড দিয়ে রাস্তা আটকে দিচ্ছিল, ফলে হাজীরা অপ্রয়োজনীভাবে দীর্ঘ পথ হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন। মানুষ যখন একটু আশ্রয়ের জন্য হাঁসফাঁস করছিল তখন পুলিশ তাদের সাথে কর্কশ ব্যবহার করছিল। অসুস্থ মানুষের সংখ্যার তুলনায় প্যারামেডিক্স ও অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। ফলে হাজিরা পর্যাপ্ত সেবা পাননি। অ্যাম্বুলেন্স ডাকার ৩০ মিনিটের মধ্যেও অ্যামবুল্যান্সের দেখা মেলেনি। এভাবে প্রয়োজনীয় জরুরী চিকিৎসার অভাবে বহু হাজির মৃত্যু হয়েছে।
হজ হচ্ছে বিশে^র প্রায় ৭০টি দেশের ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মহা মিলনমেলা। অথচ এমন একটি আর্ন্তজাতিক সমাবেশ
নিয়ন্ত্রণের ভার যাদের উপর দেয়া হয়েছে তারা আরবী ছাড়া কোনো ভাষাই বুঝেনা। এমনিক রাস্তা-ঘাট ও ক্যাম্পের অবস্থানও জানেনা। তারা মানুষকে কিভাবে পথ দেখাবে? জামারাত থেকে ক্যাম্পে ফিরবার সময় অনেকেই পথ হারিয়ে ফেলেন। আমার এক কাতার প্রবাসী বাংলাদেশী বন্ধু মিনা ক্যাম্প খুঁ জে পাচ্ছিলেন না। উনি আরবী ভাষায় পারদর্শী কিন্তু তবুও পুলিশের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাননি। পুলিশের সোজা সাপ্টা উত্তর হচ্ছে – আমরা জানিনা। সত্যি বলতে কি সৌদি আরব হজের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য বহু পদক্ষেপ নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু দু:খজনকভাবে সেগুলো কার্যকর ও যথেষ্ট নয়।
জামারাতে গিয়ে একজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান হাজীয়ানের মুখে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা শুনে শিউরে উঠি। জামারাতে যাবার পথে উনার স্বামী অসুস্থ পড়লে হুইল চেয়ার ঠেলে উনি স্বামীকে জামারাতে নিয়ে যান। স্বামীর হুইল চেয়ারটা এক পাশে রেখে উনি কংকর নিক্ষেপ করে এসে দেখেন তাঁর স্বামী নেই। পাগলের এদিক ওদিক খোঁজা- খুঁজির পর নিরাপত্তা বাহিনী তাঁকে পুলিশ স্টেশনে যেতে বলে। পুলিশ স্টেশনে গেলে স্বামীর ডেথ সার্টিফিকেট হাতে

ধরিয়ে দিয়ে তাকে বলা হয় উনার স্বামী মারা গেছেন এবং উনার দাফনও সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে কোথায় দাফন করা হয়েছে সেটা তারা বলতে পারেনি। ওই মহিলা অনেকটা উ™£ ান্তের মত স্বামীর শেষ ঠিাকানা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। মানুষ বড় অংকের অর্থ দিয়ে হজ করতে যান। সেই অর্থ ব্যয় করে হজের সার্বিক ব্যবস্থাপনা আরো সুন্দর ও উন্নত করা সৌদি সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। হজ্জ করতে গিয়ে যারা মুত্যু বরণ করেছেন তাঁরা অবশ্যই সৌভাগ্যবান। কিন্তু বৈধ কিংবা অবৈধ যে ধরণের হাজিই হোক না কেন অবহেলা কিংবা অব্যবস্থাপনার জন্য কোনো মৃত্যু মেনে নেয়া যায়না।
সরকারী হিসাব অনুযায়ী ২০০৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হাজীদের সংখ্যার একটি গ্রাফ দেয়া হল। দেখা যাচ্ছে ২০১২ সালে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ হজ করেন (৩,১৬১,৫৭৩)। হাজীদের সংখ্যা কোভিডের জন্য কমে ২০২০ সালে মাত্র এক হাজারে নেমে আসে। এরপর ২০২১ সালে ৫৮,৭৪৫ জন থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে প্রায় ১৮ লক্ষেরও বেশী হয়েছে। সবচেয়ে বেশী হাজী যায় ইন্দোনেশিয়া থেকে (২,২১,০০০) এরপর পাকিস্তান, আর বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে। তবে অবৈধ হাজীদের সংখ্যা যোগ করলে মোট হাজীর সংখ্যা সরকারী হিসাবের চেয়ে অনেক বেশী হবে। এদিকে উচ্চ মূল্যের জন্য বাংলাদেশের কোটা খালি পড়ে থাকলেও ইন্দোনেশিয়া, অষ্ট্্েরলিয়া,ইউরোপ ও বহু আরব দেশ থেকে হজ করতে ইচ্ছুক মুসলিমদের সংখা বেড়েই চলেছে। হাজীদের কোটা বৃদ্ধির জন্য ওই দেশগুলো সৌদি সরকারকে চাপ দিচ্ছে।

ধরিয়ে দিয়ে তাকে বলা হয় উনার স্বামী মারা গেছেন এবং উনার দাফনও সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে কোথায় দাফন করা হয়েছে সেটা তারা বলতে পারেনি। ওই মহিলা অনেকটা উ™£ ান্তের মত স্বামীর শেষ ঠিাকানা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। মানুষ বড় অংকের অর্থ দিয়ে হজ করতে যান। সেই অর্থ ব্যয় করে হজের সার্বিক ব্যবস্থাপনা আরো সুন্দর ও উন্নত করা সৌদি সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। হজ্জ করতে গিয়ে যারা মুত্যু বরণ করেছেন তাঁরা অবশ্যই সৌভাগ্যবান। কিন্তু বৈধ কিংবা অবৈধ যে ধরণের হাজিই হোক না কেন অবহেলা কিংবা অব্যবস্থাপনার জন্য কোনো মৃত্যু মেনে নেয়া যায়না।
সরকারী হিসাব অনুযায়ী ২০০৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হাজীদের সংখ্যার একটি গ্রাফ দেয়া হল। দেখা যাচ্ছে ২০১২ সালে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ হজ করেন (৩,১৬১,৫৭৩)। হাজীদের সংখ্যা কোভিডের জন্য কমে ২০২০ সালে মাত্র এক হাজারে নেমে আসে। এরপর ২০২১ সালে ৫৮,৭৪৫ জন থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে প্রায় ১৮ লক্ষেরও বেশী হয়েছে। সবচেয়ে বেশী হাজী যায় ইন্দোনেশিয়া থেকে (২,২১,০০০) এরপর পাকিস্তান, আর বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে। তবে অবৈধ হাজীদের সংখ্যা যোগ করলে মোট হাজীর সংখ্যা সরকারী হিসাবের চেয়ে অনেক বেশী হবে। এদিকে উচ্চ মূল্যের জন্য বাংলাদেশের কোটা খালি পড়ে থাকলেও ইন্দোনেশিয়া, অষ্ট্্েরলিয়া,ইউরোপ ও বহু আরব দেশ থেকে হজ করতে ইচ্ছুক মুসলিমদের সংখা বেড়েই চলেছে। হাজীদের কোটা বৃদ্ধির জন্য ওই দেশগুলো সৌদি সরকারকে চাপ দিচ্ছে।
হজের সময় হাজীদের দেখভাল করা ও দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রতিবছর ৩-৪ হাজার হজ অফিসার সৌদি আরবে পাঠানো হয়। বিশেষ পোশাক পরিহিত এসব কর্মকর্তারা সর্বদা হাজীদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন। মিয়ানমারের মিনা ক্যাম্পেও আমি এ ধরনের গাইড দেখেছি। তবে বাংলাদেশী হাজীদের সাহায্য করার জন্য সাথে কোনো হজ কর্মকর্তা চোখে পড়েনি। স্থানীয় পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনীকে হজ ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করার জন্য সৌদি সরকার বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেকের দল আহŸান করতে পারে। যে কোনো মুসলিম দেশ এতে সাড়া দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
হজ থেকে সৌদি সরকার প্রতি বছর প্রায় ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে যা সৌদি জিডিপি’র ২০
শতাংশ। এছাড়া সারা বছর উমরা থেকে অতিরিক্ত আয়ের পরিমান ৪-৫ বিলিয়ন ডলার। তাই হাজীদের সুরক্ষার জন্য
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সৌদি সরকারের সমস্যা কোথায়?
দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করলেও অবশেষে এই বছর (২০২৪) আমার হজ করার সৌভাগ্য হয়। আগে উমরা করেছি। কিন্তু সত্যি বলতে কি হজে না গেলে হজের ব্যাপ্তি ও আধ্যাত্মিকতার মানে বোঝা অনেকটা অসম্ভব। মক্কায় যাবার পরের দিনগুলো যেনো কেটেছে ঘোরের মধ্যে। মনে হচ্ছিল যেনো অন্য গ্রহালোকে বসবাস করছি। সবাই পাল্লা দিয়ে ছুটছে কা’বার পানে। অন্য কোনো দিকে তাকানোর যেনো হুশ নেই কারো। সবাই চেষ্টা করছে কি করে বেশী বেশী সাদাকা করা যার, নেকী কামানো যায়। অনেকে দেদার দান-খয়রাত করছিলেন। ভালো কাজ করার জন্য যেন চলছিল প্রতিযোগীতা। কেউ জায়নামাজ, খাবার, ফোল্ডিং চেয়ার ও পানি ইত্যাদি কিনে মানুষের মধ্যে বিতরণ করছিলেন।

দেখলাম বাসের উঠার সময় অনেকে নিজে না উঠে আগে অন্যকে উঠার সুযোগ দিচ্ছে। মনে হচ্ছিল যেন এক নতুন পৃথিবী দেখছি। আহা! পৃথিবীটা যদি চিরকাল এমন থাকতো? তবে এর ব্যাতিμমও চোখে পড়েছে। হজের অর্থই হল ত্যাগ স¦ীকার করা, নিজের আগে অন্যের চাহিদাকে প্রাধান্য দেয়া, মানুষের সেবা করা, কোনো রকমের বিতর্কে জাড়িয়ে না পড়া ইত্যাদি। কিছুু সংখ্যক মানুষকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিতর্র্কে জড়িয়ে পড়তে দেখলাম। বিশেষ করে তোয়াফের সময় মারমুখী মানসিকতা থেকে যদি আমরা বেরিয়ে আসতে পারতাম তাহলে তাওয়াফ করাটা অনেক স্বস্তিকর হত। আল্লাহ আমাদের প্রকৃত হজের সরূপ সন্ধান করার তৌফিক দিন। আমিন

Tag :
About Author Information

অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশী কোটায় হজ পালন

Update Time : ০৪:৪৮:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

একটি দেশ থেকে কতজন মুসলিম নাগরিক হজে যেতে পারবেন তার একটি কোটা নির্ধারন করে দিয়েছে সৌদি সরকার। যা হল মুসলিম জনসংখ্যার প্রতি হাজারে একজন। চলতি বছরে বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা ছিল ১,২৭,১৯৮ জন। অন্যদিকে অস্ট্র্রে লিয়ার জন্য বরাদ্দকৃত কোটা হচ্ছে মাত্র ২,০৯০ জন। হজ প্যাকেজের উচ্চ মূল্যের কারণে এবারে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত কোটার ৪৪,০৪৩ টি স্থান খালি ছিল।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার জন্য নির্ধারিত ২০৯০ জনের কোটা ছিল নিতান্তই অপ্রতুল। এজন্য অর্থ এবং ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই অস্ট্রেলিয়া থেকে হজে যেতে পারেননি।
অস্ট্র্রে লিয়া থেকে সাধারণত বিভিন্ন হজ এজেন্সির মাধ্যমেই সবাই হজ করতে যেতেন। কিন্তু ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ সহ পশ্চিমা দেশগুলোর মুসলিমদের জন্য সৌদি সরকার অন-লাইন প্ল্যাটফর্ম “নুসুক” চালু করে। হজে যেতে ইচ্ছুক এসব দেশের মুসলিম নাগরিকদের এই নুসুক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিবন্ধন করে হজ প্যাকেজ কিনতে হয় এবং ফ্লাইট বুকিং দিতে হয়। প্রথমবার চালু করা এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায়, ২০২৩ সালে হজের প্যাকেজ বুকিং দিতে গিয়ে সবাইকে চরম অনিশ্চয়তা ও মানসিক চাপে ভুগতে হয়েছে। কোভিড পরবর্তী অত্যধিক চাহিদার কারণে নুসুক প্ল্যাটফর্মে হজ প্যাকেজ বুকিং করা রীতিমত চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল। নুসুক প্ল্যাটফর্মে কখন প্যাকেজ আসবে সেই অপেক্ষায় অনেককে ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত কম্পিউটার খুলে অনলাইনে বসে থাকতে হয়েছে। এছাড়া অধিকাংশ নুসুক হজ প্যাকেজের আকাশচুম্বী মূল্য অনেকের সাধ্যের বাইরে ছিল। তবে এ বছর (২০২৪) নুসুক প্ল্যাটফর্মের বেশ উন্নতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বছর আমার পরিচিত অনেকে বাংলাদেশী হজ কোটায় বাংলাদেশ হয়ে হজ পালন করে এসেছেন।
তাই নুসুক প্ল্যাটফর্মের অনিশ্চয়তায় না গিয়ে আমি বাংলাদেশী হজ কোটায় কিভাবে যাওয়া সে নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করি। তবে বাংলাদেশে না গিয়ে সরাসরি সিডনী থেকে হজে যাওয়া যায় কিনা তা অনুসন্ধান করার জন্য বেশ কয়েকটি বাংলাদেশী হজ এজেন্সির সাথে কথাও বলি। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের অভিজ্ঞতা না থাকায় এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাইনি। এরই মধ্যে জানতে পারি গত বছর চেীধুরী হজ কাফেলা নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে সিডনী ও অস্ট্র্রেলিয়ার অন্যান্য শহর থেকে অনেকে বাংলাদেশী হজ কোটায় অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি সৌদি আরবে গিয়ে হজ পালন করে এসছেন। তঁ াদের
পথ ধরে আমিও এ বছর ওই এজেন্সির মাধ্যমেই হজ সম্পন্ন করি।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ হজ কোটায় হজ ভিসা দেয়া হয় বাংলাদেশী পাসপোর্টে । অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে বর্হিগমনের সময় অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট দেখিয়েই আমাদের বের হতে হয়। তাই হজ যাত্রার সময় দুটি দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ ছিল। কারো মতে এটা কখনো সম্ভব নয়। তবে এবছর হজ পালন করে দেখলাম এটা নতুন কিছু নয়। দ্বৈত নাগরিকত্বধারী অনেকেই ভ্রমনের সময় দুটি দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন। বিমান বন্দরে চেক-ইন কাউন্টারের অধিকাংশ কর্মী দের এ বিষয়টি জানা থাকার কথা। তবে বোর্ডিং পাস ইস্যু করার সময় কাউন্টারের অফিসারকে ইতস্ততঃ করতে দেখলে অন্য
কাউন্টারের কোনো অফিসার কিংবা সুপারভাইসরের পরামর্শ নেয়া উচিত।

হজ করতে গেলে হাজীদের জিদ্দা বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশান করতে হয়। সিডনী কিংবা অস্ট্রেলিয়ার অন্য কোনো শহর থেকে জিদ্দা পর্যন্ত সরাসরি (Non-stop) কোনো ফ্লাইট নেই। তাই যাবার পথে অপনি কোন এয়ারলাইন্সের টিকিট কাটছেন তার উপর ভিত্তি করে একটি ট্রানসিট স্টপওভার নিতে হয়। যেমন ইত্তিহাদে টিকিট কাটলে আবুধাবী, আর কাতার এয়ারওয়েজে গেলে কাতারে ট্রানসিট নিতে হয়। অন্যদিকে হজ যাত্রার জন্য দুটো ভিন্ন এয়ারলাইন্সও ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন আমি মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সে করে কুয়ালালামপুর এবং কুয়ালালামপুর থেকে জিদ্দা সৌদিয়া এয়ারলাইন্সে করে যাই। মূল কথা হল, একটি দেশের ইমিগ্রশানে Entry ও Exit করার সময় একই পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হবে। Entry করার সময় এক পাসপোর্ট আর ঊীরঃ কবার সময় অন্য পাসপোর্ট ব্যবহার করলে স্বভাবতই ওই যাত্রীকে ইমিগ্রেশান অবৈধ বলে বিবেচিত করবে। অন্যদিকে এয়ারলাইন্স চেকইন কাউন্টার ইমিগ্রেশান থেকে ভিন্নভাবে কাজ করে। তারা বোর্ডিং পাস ইস্যু করার আগে দেখবে আপনার কাছে গন্তব্য দেশের ভিসা আছে কিনা।
অস্ট্রেলিয়ার যে শহর থেকে আপনি যাচ্ছেন সেখানকার বিমান বন্দরের চেক-ইন কাউন্টার থেকে বোর্ডি ং পাস নেবার সময় দুটো পাসপোর্ট (অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশী) এবং টিকিট দেখিয়ে বলতে হবে বাংলাদেশী পাসপোর্টে আপনার হজ ভিসা রয়েছে। তখন তারা অস্ট্রেলিয়া থেকে ট্রানসিট দেশ এবং ট্রানসিট দেশ থেকে জিদ্দা যাওয়ার জন্য দুটো বোর্ডিং পাস ইস্যু করবে। অস্টেলিয়ার ইমিগ্রেশানে অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হবে আর জিদ্দা ইমিগ্রেশানে ব্যবহার করতে হবে বাংলাদেশী পাসপোর্ট। নীচের লাইন ডায়াগ্রামের মাধ্যমে পুরো প্রμিয়াটি তুলে ধরা হল।

বাংলাদেশী হজ কোটায় হজে যাবার আগে করণীয় কাজগুলো নীচে বর্নিত হল:
১. পাসপোর্ট – বাংলাদেশী পাসপোর্ট থাকতে হবে।
২. প্রাক- নিবন্ধন – ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে আপনার এজেন্সির মাধ্যমে ফি জমা দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন করতে হবে।
৩. হজ প্যাকেজ – অধিকাংশ এজেন্সির ভিআইপি, এ, বি, সি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের প্যাকেজ থাকে। আর্থিক সামর্থ এবং প্যাকজে বর্নিত সুযোগ সুবিধা দেখে হজ প্যাকেজ নির্বাচন করতে হবে।
৪. বায়োমেট্রিক্স – মোবাইল ফোনে Saudi Visa Bio অ্যাপস ডাউনলোড করে বায়োমেট্রিকস সম্পন্ন করতে হবে।
৫. হজ ভিসা – ভিসার জন্য মূল বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেশে পাঠানোর দরকার নেই। এজেন্সির কাছে পাসপোর্টের প্রথম পাতার স্ক্যান কপি পাঠালেই চলবে।
৬. মেডিকেল সার্টিফিকেট – ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিস (Meningococcal A,C,Y,W-135) ভ্যাকসিন প্রদান। ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট বাংলাদেশের মন্ত্রণালয় থেকে নিতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার ক্লিনিক থেকে নিলে হবেনা। আমাদের এজেন্সি মন্ত্রণালয় থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট বের করে আনে। তবে নিজেদের সুরক্ষার জন্য হজে যাবার আগে আমরা অস্ট্রেলিয়াতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন নিয়ে নেই।
৭. আইডি কার্ড – সৌদি আরবে হোটেলে যাবার পর সৌদি মোয়াল্লেম প্রতিটি হাজীকে সৌদি হজ ও ওমরা মন্ত্রনালয়ের একটি নুসুক কার্ড দেবে। নুসুক কার্ডটি সার্বক্ষণিকভাবে সাথে রাখতে হয়। রাস্তায় বেরুলে পুলিশ চেক পয়েন্টে নুসুক কার্ড সাথে না থাকলে বিপাকে পড়তে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও একটি আইডি কার্ড দেয় হয় যা খুব একটা কাজে লাগেনি।

জিদ্দা বিমান বন্দরের পুরো ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে যা সতিই প্রশংসনীয়। আনুমানিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে ইমগ্রেশান হয়ে যায়। লাগেজও এসেছে তড়িৎ গতিতে। বাংলাদেশীদের সাথে বিমান বন্দরে দুর্ব্যবহারের কথা বহু শুনেছি। তাই একটু শঙ্কিত ছিলাম। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই দেখিনি।
ইমিগ্রেশান থেকে বের হবার পর আমাদের গ্রুপের কেবল একজনের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেখেই ছেড়ে দিল। বিমান বন্দরে নেমেই দেখলাম ইংরেজীতে পারদর্শী একঝাঁক তরুণ স্বেচ্ছাসেবকের দল যারা হাজীদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছিল। মক্কায় যে হোটেলে আমরা থাকবো তার নাম বলতেই সৌদি মোয়াল্লেম আমাদের জন্য নির্ধারিত একটি বাসে তুলে দিল। বাসে উঠেই দেখি রিফ্রেসমেন্ট – জুস, কেক ও বিস্কিটের প্যাকেট।
অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশী কোটায় হজে যাবার সময় ভিসা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাজগুলো সুসম্পন্ন করতে হলে একজন স্মার্র্ট হজ এজেন্সির প্রয়োজন। তাই সবার আগে সঠিক এজেন্সি নির্বাচন করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হজের প্যাকেজ নির্বাচন হজের ফরজ কাজ তিনটি (৩):
১. ইহরাম বাঁধা; ২. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা; ৩. তাওয়াফে জিয়ারত বা কাবা তাওয়াফ করা হজের ওয়াজিব কাজ ছয়টি (৬):
১. মুজদালিফায় নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করা
২. নির্দিষ্ট দিনে জামারাতে কংকর নিক্ষেপ করা
৩. হজের কুরবানি করা
৪. ইহরাম ত্যাগের জন্য মাথার চুল মুন্ডানো বা ছোটো করা
৫. তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ি তাওয়াফ করা
৬. সাফা মারওয়া সায়ি করা
জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই পাঁচ দিনে পাঁচ জায়গায় (১. মিনা ২. আরাফা ৩. মুজদালিফা ৪.
জামারাত ৫. বাইতুল্লাহ) নয় কাজ (৩ ফরজ+৬ ওয়াজিব) করাকে হজ বলে। হজের কার্যμমগুলো নীচের ছবিতে তুলে
ধরা হল।

হজ তিন প্রকার: ১. কিরান ২. তামাত্তু ও ৩. ইফরাদ। মক্কার বাইরে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা উপরোক্ত যে কোনো প্রকার
হজ করতে পারেন।
১. কিরান: মীকাত অতিμমের পূর্বে উমরা ও হজের ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে উমরাহ ও হজ উভয়টি সম্পন্ন করা। প্রথমে মক্কায় পৌঁছে উমরা করা। অতঃপর এই ইহরাম দ্বারা হজের সময়ে হজ করা ও কুরবানী দেয়া।

২. তামাত্তু হজ: মিকাত থেকে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কায় পৌঁছে উমরার কাজ সম্পন্ন করা ও পরে চুল কেটে বা চেঁছে ইহরাম মুক্ত হওয়া। অতঃপর এই সফরেই হজের ইহরাম বেঁধে হজের নির্ধারিত কাজগুলো সম্পন্ন করা এবং কুরবানী দেওয়া। আমরা তামাত্তু হজ করেছি।
৩. ইফরাদ: মিকাত থেকে শুধু হজের নিয়াতে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কায় পৌঁছে উমরা না করা বরং তাওয়াফ সেরে ইহরাম অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করা। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে হজের আমলগুলো সম্পন্ন করা। হজের যাবার আগে বৈষয়িক ও মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ হজ মন্ত্রনালয়ের সাথে প্রাক-নিবন্ধনের পর এ বছরের জানুয়ারীতেই আমার হজ কোটা নিশ্চিত হয়েছিল। যা আমাকে মানসিক স্বস্তি দিয়েছিল। ফলে আমি সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে পেরেছিলাম।
হজের যাবার আগে নিজের পছন্দনীয় একটি প্যাকেজ নির্বাচন করা খুব একটা সহজসাধ্য কাজ নয়। হজের কার্যক্রম
(Rites) সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় অনেক সময় হাজিরা সঠিক প্যাকেজ নির্বাচন করতে ব্যর্থ হন এবং পরে বিপাকে
পড়েন। এছাড়া অনেক এজেন্সি হজের প্যাকেজে বহু সুযোগ সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা দিতে ব্যর্থ হন। তাই
আগে ভাগে প্যাকেজের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে এজেন্সির সাথে কথা বলে নেয়া উচিত।
নুসুক প্ল্যাটফর্র্মে অবশ্য এজেন্সির সাথে আগে কথা বলার সুযোগ থাকনা। অনলাইনে বিস্তারিত পড়ে নিয়ে একটা ধারণা
করতে হয়। ভালো প্যাকেজগুলোর বেশী চাহিদা থাকে বলে সেগুলো খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়। তাই ইচ্ছে থাকলেও
নিজের পছন্দমত প্যাকেজ পাওয়া যায়না। এখন আমি যে বাংলাদেশী প্যাকেজে গিয়েছি তার বিভিন্ন দিকগুলো তুলে ধরার
চেষ্টা করব।
সাধারণত সুযোগ সুবিধার উপর নির্ভর করে হজ এজেন্সিগুলো বিভিন্ন ধরণের প্যাকেজ দিয়ে থাকে। যেমন -– ভিআইপি,
এ, বি, সি ইত্যাদি। মক্কা ও মদিনায় বায়তুল্লাহ ও মসজিদে নববী থেকে হোটেলের দুরত্ব, হোটল রুমে কয়জন থাকবে,
মিনা ক্যাম্পের মান, পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে প্যাকেজের মূল্য ও ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া অনেক এজেন্সি হাজীদের প্রথমে সরাসরি মদিনায় নিয়ে যায় এবং হজের আগে মক্কায় নিয়ে আসে। হজের মওসুমে
মক্কায় হোটেল ভাড়া মদিনার চেয়ে বহুগুনে চড়া হওয়ায় হাজীদের আগে মদিনায় রাখলে তাদের অর্থ সাশ্রয় হয়।
এবার মিনা ক্যাম্পের কথায় আসি। হজের সময় মিনায় তিন রাত থাকতে হয় তাই অনেকে মান সম্পন্ন মিনা ক্যাম্পে
থাকতে চান। মিনা ক্যাম্পে আরব দেশ, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলো সহ বিভিন্ন দেশের
হাজীদের জন্য নির্ধারিত এলাকা রয়েছে। সুযোগ-সুবিধার উপর ভিত্তি করে মিনার ক্যাম্পগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে ভাগ
করা হয়েছে:
Al Kabsh (VIP) – জামারাত থেকে ৩০০-৭০০ মিটার দুরত্বে অবস্থিত এই ক্যাম্পের প্রতি তাবুতে হাজীর সংখ্যা মাত্র
১০-২০জন। এতে রয়েছে সোফা বেড, বালিশ, লেপ, ও Split AC. রয়েছে সকালের নাস্তা, দুপর ও রাতের খবার (বিভিন্ন আইটেমের বুফে খাবার)।
Category A – জামারাত থেকে ৬০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত এই ক্যাম্পের প্রতি তাবুতে হাজীর সংখ্যা ১০-২০জন। অন্যান্য সুবিধাগুলো ভিআইপি ক্যাম্পের মত।
Al Muaisim – অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, তুরস্ক ও ইউরোপের হাজীদের এই ক্যাম্প রাখা হয়। জামারাত থেকে এর দুরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার। প্রতি তাবুতে হাজীর সংখ্যা ৫০-১০০ জন। বাকী সুবিধাগুলো ভিআইপি ও ‘এ’ ক্যাটাগরীর মাঝামাঝি। ঈধঃবমড়ৎু ই Category B- জামারাত থেকে দুরত্ব প্রায় ৫০০মিটার থেকে ১ কিলোমিটার। প্রতি তাবুতে হাজীর সংখ্যা ৩০-৫০
জন। এতে রয়েছে বালিশ, লেপ, ও Split AC. সকালের নাস্তা, দুপর ও রাতের খাবার (বুফে খাবার)

Category C – জামারাত থেকে দুরত্ব প্রায় ১-৩ কিলোমিটার। প্রতি তাবুতে হাজীর সংখ্যা ১০০ জনের বেশী। এতে
থাকবে ৫৫০ মিমি চওড়া ফোম ম্যাট্রেস, ছোটো বালিশ, চাদর ও এসি। মোয়াল্লেম সরবরাহকৃত তিন বেলার খাবার (বুফে
নাই)।
Category D – জামারাত থেকে দুরত্ব ৩ কিলোমিটারেরও বেশী। প্রতি তাবুতে হাজীর সংখ্যা ১০০- ১৫০ জন। ৫৫০ মিমি চওড়া ফোম ম্যাট্রেস, ছোটো বালিশ, চাদর ও এয়ারকুলার। মোয়াল্লেম সরবরাহকৃত তিন বেলার খাবার (বুফে নাই)।
চাইলে ক্যাম্প ক্যাটাগরী আপগ্রেড করা যায়। যেমন ক্যাটাগরি ডি থেকে এ-তে আপগ্রেড করতে কোনো কোনো এজেন্সি আড়াই লক্ষ টাকা অতিরিক্ত চার্জ করে। তবে আপগ্রেড করাটা খুব সহজ কাজ নয়। এটা সৌদি আরবের মোয়াল্লেমের সাহায্য নিয়ে করতে হয়। এছাড়া হাজীদের সাথে আপগ্রেডেড ক্যাম্পে এজেন্সির একজন প্রতিনিধিও দিতে হয়। তাই ভিআইপি প্যাকেজ না নিয়ে অন্য প্যাকেজ নিলে মিনা ক্যাম্প আপগ্রেড করতে এজেন্সি অনীহা প্রকাশ করে। এজন্য ইচ্ছে থাকলেও আমার মিনা ক্যাম্প আপগ্রেড করা সম্ভব হয়নি। তাই প্যাকেজ র্নিধারণ করার সময় মিনাতে কোন ক্যাটাগরি ক্যাম্পে রাখা হবে তা পরিস্কার জেনে নেয়া উচিত। মিনা ক্যম্পের একটা বিস্তারিত ম্যাপ দিলাম (ছবি দেখুন)। এবার আমাদের হজ প্যাকেজের সুযোগ-সুবিধাগুলোর বর্র্ণ না দিচ্ছি:
❖ প্যাকেজের সময়সীমা: বাংলাদেশী প্যাকেজগুলোর সময়সীমা ১৫ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তবে আমরা যারা অস্ট্রেলিয়া থেকে গিয়েছি তাঁদের অধিকাংশই ১৫ কিংবা ২১ দিনের প্যাকেজ নির্বাচন করি।
❖ মক্কার হোটেল:– জিদ্দা বিমানবন্দর থেকে আমাদের সরাসরি মক্কার হোটেলে নেয়া হয় এবং হজের পর আমরা মদিনায়
যাই। আমাদের হোটেল মসজিদুল হারাম থেকে ১০ মিনিট হাঁটার দূরত্বে কøক টাওয়ারে পেছরে মিসফালা এলাকায়, বিখ্যাত কবুতর চত্বরের সাথেই ছিল। মহিলা ও পুরুষদের আলাদাভাবে হোটেল রুমে চারজন করে রাখা হয়। তিনজন কিংবা স্বামী-স্ত্রী দুইজনও একজন রুমে থাকার অপশান রয়েছে। তবে এজন্য অতিরিক্ত ফি গুনতে হবে।

❖ পছন্দের প্যাকেজে হোটেল কেমন দিচ্ছে তা যাচাই করতে হলে হোটেলে কতটা স্টার রয়েছে তা না দেখে বরং
আপনার হোটেল হারাম শরীফের কতটা কাছে সেটাই আগে দেখা উচিত। হোটেল হারাম শরীফের যত কাছে হবে হারামে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ও তাওয়াফ করা ততটা সহজ হবে।
❖ আমাদের হোটেলের রেস্তোরাঁয় তিন বেলা বাংলাদেশী খাবার দেয়া হত। মাছ, মাংস, ডাল, শাক, বিরিয়ানীর স্বাদ যেনো এখনো মুখে লেগে আছে। মিসফালাকে বাঙালি পাড়া বললেই চলে। অধিকাংশ বাংলাদেশী হাজিরা এই এলাকার হোটেলে থাকেন। মিসফালার হোটেল থেকে বের হলেই চোখে পড়বে সারি সারি বাংলাদেশী ও পাকিস্তানী রেস্তোরাঁ।
❖ মদিনাতে আমাদের মান সম্মত হোটেলে রাখা হয় যা মসজিদে নববী থেকে মাত্র তিন মিনিট হাঁটার পথ। এখানেও
তিন বেলা বুফে খাবার সরবরাহ করা হত।
❖ মক্কা থেকে মিনা ক্যাম্প, মিনা থেকে আরাফাত, জামারাত থেকে মক্কা, মক্কা থেকে মদিনা, এবং ফিরে আসার সময়
মদিনা থেকে জিদ্দা বিমান বন্দর পর্যন্ত এজেন্সির পক্ষ থেকে বাস সার্ভিস ছিলো। মিনা থেকে জামারাত ট্রেনে করেও যাওয়া যায়। হাজিরা চাইলে হারামাইন হাই স্পিড ট্রেনে চড়ে মক্কা থেকে মদিনা কিংবা জিদ্দা বিমানবন্দরে যেতে পারেন। অন-লাইনে ট্রেনের টিকিট কাটা যায়। ট্রেনের টিকেট দ্রæত ফুরিয়ে যায় তাই আগে ভাগে টিকেট কাটা উচিত। উল্লেখ্য হারামাইন হাই স্পীড ট্রেনে বড় আকারের লাগেজ রাখারও সুব্যবস্থা রয়েছে।
❖ বাসে করে মক্কা ও মদিনার দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শনের ব্যবস্থা ছিল।
❖ মিনা ক্যাম্পে বাংলাদেশী হাজীদের সাধারনত ডি ক্যাটাগরী তাবুতে রাখা হয়। হাজীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মুজদালিফার কিছু অংশ মিনার মধ্যে অর্ন্তভ‚ক্ত করে নেয়া হয়েছে। এজন্য মিনা ক্যাম্পের ম্যাপে দেখা যায় অধিকাংশ বাংলাদেশী তাবু মিনার সীমানা ছাড়িয়ে মুজদালিফায় মধ্যে। আমাদের তাবুটাও ছিল মুজদালিফায়। এর সুবিধা হচ্ছে, আমাদের তাবুর মধ্যে রাত্রি যাপন করলেই মুজিদালিফায় থাকার শর্ত (ওয়াজিব) আদায় হয়ে যাবে। আমাদের তাবুর ৫০ মিটারের মধ্যেই ছিল কার্পেট বিছানো মুজদালিফায় রাত্রি যাপনের জায়গা। ওখানে জায়গা না পাওয়ায় পাশে রাস্তাতেই খোলা আকাশের নীচে আমরা রাত কাটাই। মুজদালিফায় জামারাতে মারার জন্য কংকর যোগাড় করতে হয়। তবে ইদানিং হজ গ্রæপের মোয়াল্লেমরাই ব্যাগে করে হাজীদের কংকর সরবরাহ করেন।

❖ আমাদের মিনা ক্যাম্পের তাবুতে প্রায় ১৫০জন হাজী ছিলেন। শোবার জন্য ছিল ৫৫০ মিমি চওড়া পাতলা ফোম ম্যাট্রেস। প্রচন্ড গরমের সময় এ ধরণের তাবুতে থাকা অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। কারণ অনেকসময় এয়ার কুলার কাজ করেনা, আর টয়লেটে থাকে লম্বা লাইন। এজন্য প্রচুর ধৈর্য ধারণ করতে হয় এবং সহনশীল হতে হয়। মিনার তাবুতে ঢুকে ভেতরটা দেখে প্রথমে চমকে উঠেছিলাম। তবে আলহামদুলিল্লাহ, মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হয়নি। আমি এটাকে হজের একটা পরীক্ষা বলেই ধরে নিয়েছিলাম। তাবুতে আশে পাশের লুঙ্গী ও গামছা গায়ে হাজীদের দেখে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর যে দেশেই থাকিনা কেন, আমিতো এঁদেরই একজন, এখানেইতো অমার শেকড়।
❖ ক্যাম্পে) খাবার পানির কোনো সমস্যা নেই। তাবুর বাইরে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ফ্রিজ ভর্তি পানির বোতল। ক্যাম্পের এক পাশে রয়েছে রান্না ঘর, যেখানে বিশাল বিশাল হাড়িতে বাংলাদেশী হাজীদের জন্য খাবার পাকানো হয়। তিন বেলা বক্সে করে তাবুতেই হাজীদের খাবার সরবরাহ করা হয়। এছাড়া তাবুর বাইরে বড় বড় ডিসপেন্সারে থাকে গরম চা। চায়ের জন্য দেখলাম লম্বা লাইন। একবার দেখি খাওয়া দাওয়া শেষে পর এক হাজী পানের ডিব্বা খুলে বসেছেন। চাইলে আমাকেও একটু ভাগ দিলেন।
❖ ক্যম্পে ঝয়ঁধঃ ্ ঈড়সসড়ফব দু’ধরণেরই টয়লেট রয়েছে। টয়লেটগুলো নতুন এবং বেশ পরিচ্ছন্ন। নিয়মিতভাবে
পরিস্কার করা হচ্ছে। যেমনটা আগে ভেবেছিলাম সেরকম নয়।
❖ আরাফাতের ক্যাম্প আরেকটু উন্নত মনে হল, তাতে ঝঢ়ষরঃ অঈ ছিল। এখানেও বাংলাদেশী খাবারের ছিল।
❖ হজের পর কুরবানীর ব্যবস্থাও এজেন্সি করে দেয়। কুরবানীর জন্য জন প্রতি আমরা ৭০০ রিয়াল করে দিয়েছি। তবে
সরকারী মূল্য হচ্ছে প্রতি ভাগ ৭২০ রিয়াল। এই টাকা নিজে যে কোনো স্থানীয় ব্যাংকে কুরাবানীর জন্য জমা দেয়া যায়। কুরবানী দেয়া হলে কর্তৃপক্ষ আপনার ফোনে ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দেবে।
❖ মদিনায় রিয়াদুল জান্নায় জিয়ারতের গ্রæপ বুকিংও এজেন্সির পক্ষ থকে দেয়া হয়। অবশ্য গ্রæপ বুকিং-এর জন্য বসে
না থেকে ফোনে নুসুকের অ্যাপস নামিয়ে নিজেও বুকিং দেয়া য়ায়। তবে সেটা দেরী না করে বুকিং দেয়া উচিত নাহলে পরে ¯øট পাওয়া মুশকিল ।

হজের প্রস্তুতি
হজে যাবার সময় সাথে কি ধরণের জিনিসপত্র নিতে হয় তা নিয়ে এখন লিখবো। অবশ্য এ নিয়ে অন-লাইনে, ইউটিউব ভিডিওতে প্রচুর তথ্য রয়েছে। একটু রিসার্চ করলেই বিস্তারিত জানা যায়। QURAN- তাফসির সহ কুরআন এবং অন্যান্য ধর্মীয় বই ।

IHRAM & IHRAM BELT জিদ্দা বিমান বন্দরে অবতরণের আগে মিকাতের সীমানা পার হতে হয় বলে বিমানে কিংবা ট্রানসিট বিমানবন্দরে ইহরাম পরিধান করে নিতে হয়। তাই অস্ট্রেলিয়া ছাড়ার আগে হ্যান্ড লাজেগে এক সেট ইহরামের কাপড় রাখতে হয়। আমি সিডনীর Auburn এলাকা থেকে ইহরামের কাপড় ও বেল্ট কিনেছিলাম। লক্ষ্য রাখতে হবে ইহরামের কাপড় যাতে খুব মোটা না হয় তাহলে গরমে খুব অস্বস্তিকর হতে পারে। দুই সেট ইহরামের কাপড় থাকলে ভালো। একটি কোনো কারণে ময়লা হয়ে গলে যাতে অন্যটি পরিধান করা যায়। তবে ২য় ইহরামের সেট মক্কা থেকে কেনা উচিত। মক্কায় হোটেলের আশে পাশের যে কোনো দোকানে ৩০ রিয়ালের মধ্যে ইহরামের সেট পাওয়া যায়।তাওয়াফ করার সময় ইহরাম বেল্টে মোবাইল ফোন, টাকা ও ব্যাংক কার্ড রাখার জন্য খুব কাজে দিয়েছিল।

TOILETERIES
সত্যি বলতে কি প্রচুর রিসার্চ করে সাথে বহু কিছু নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তার অনেক কিছুই ব্যবহার করার সুযোগ হয়নি। তবে compressed tissue, door hook, wet wipes এবং ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধহীন সাবান কাজে লেগেছে।
গরম থেকে সুরক্ষার জন্য দরকার হাইড্রালাই (ট্যাবলেট/তরল), ছাতা, সানগøাস, ও যদি সম্ভব হয় Portable misting fan. হোটল থেকে বেরুলেই আমরা নিয়মিত হাইড্রলাইট মিশ্রিত পানি পান করতাম। হজের সময় যখন দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে হয়েছে
তখন একটি ফেস টাওয়েল ঠান্ডা পানি দিয়ে ভিজিয়ে মুখ মুছে নিতাম যা স্বস্তি এনে দিতো। মিনা ক্যাম্পে ও হাঁটার সময় Portable misting fan খুব কাজে দেয়। মক্কার হোটেলে যাবার পর পরই সৌদি মোয়াল্লেম একটি করে সাদা রংয়ের ছাতা
দিয়েছিল কিন্তু তা খোলার আগেই দেখি ভেঙ্গে গেল । ছাতা এখান থেকে না নিয়ে মক্কার দোকান থেকে কেনা যায়, দাম মাত্র ১০ রিয়াল। আনেক সময় ছাতা হারিয়ে যায় কিংবা ভেঙ্গে যায়। তাই হজের পুরো সময়টাতে কয়েকটি ছাতার প্রয়োজন হতে পারে।

MEDICATION
আমরা যে সব ওষুধ নিয়মিত যেবন করি সেগুলো ছাড়া যেগুলো সাথে করে নেয়া উচিত: Paracetamol
/Ibuprofen, Cold & Flue, Loperamide (diarrhoea), common anti-biotics, band aid, antiseptic cream, anti-rash cream ইত্যাদি। আসলে কোন ওষুধ কখন কাজে লাগবে তা বলা মুশকিল। যেহেতু অসুস্থ হয়ে পড়লে অনেক সময় ক্লিনিক কিংবা ডাক্তারের কাছে যাবার সময় থাকেনা তাই উপরের ওষুধগুলো হাতের কাছে থাকলে ভাল হয়।

হজের সময় মসজিদুল হারামে যাওয়া ও তাওয়াফ করার জন্য প্রতিদিনই প্রচুর হাঁটতে হয়। পায়ের ব্যথা দূর করার জন্য আমি নিয়মিত প্যারাসিটামল খেতাম। মক্কায় কোনো রকমের ঠান্ডা পানীয় স্পর্শ না করার পরও মিনায় যাবার পর থেকে আমার জ¦র, গলা ব্যথা ও কাশি শুরু হয়। যা এখনো সারেনি। আমি সাথে করে করে এন্টিবায়োটিক্স নেইনি। তবে একজন হজের সাথী থেকে এন্টিবায়োটিক্স ক্যাপসুল ধার নিয়ে খাওয়ার পর কিছুুটা সুস্থ হই।
প্রচন্ড গরম ও ঘামে অনেকের র‌্যাশ হয়। বাজারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে 3B Action Cream টি সেরা। এটি Coles কিংবা যে কোনো ফার্মেসীতে পাওয়া যায়।
তাওয়াফ ও চলাফেরা করার সময় অনেককে পায়ে আঘাত পেতে দেখেছি। আমার নিজেরই বাথরুমের দরজার লেগে পায়ের বুড়ো আঙ্গুলটি কেটে যায়। এজন্য ব্যান্ড এইড ও এন্টিসেপটিক μিমের প্রয়োজন।
মক্কার মিসফালাতেই রয়েছে বাংলাদেশ হজ মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল ক্লিনিক। ক্লিনিকে রয়েছে ৮-১০ জন চৌকস ডাক্তার আর ফার্মেসী। ফার্মেসী থেকে বিনামূল্যে হাজীদের ওষুধ দেয়া হয়। কিøনিকের পুরো ব্যবস্থাপনা সত্যিই প্রশংসনীয়। মক্কায় যাবার দু’দিনের মাথায় অসুস্থবোধ করলে আমি বাংলাদেশ ক্লিনিকে যাই। রিসেপশানে গিয়ে বাংলাদেশী আইডি কার্ড দেখাতেই আমাকে একটি টিকিট দেয়া হল। রোগীর সংখ্যা বহু হলেও সবাইকে সুশৃংখলভাবে লাইনে দাঁড়াতে দেখলাম। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ডাক্তারের কাছ থেকে প্রেসμিপশান নিয়ে ফার্মেসী থেকে ওষুধ পেয়ে গেলাম। এজন্য বাংলাদেশ হজ মন্ত্রণালয়কে সাধুবাদ জানাতেই হয়।
THINGS FOR HAJJ DAY
মিনা/আরাফাত/মুজদালিফার জন্য একটি মাঝারি সাইজের স্কুল ইধপশঢ়ধপশই যথেষ্ট (গরহস ৪০খ)। মিনা ক্যাম্পে খুবই অল্প জিনিসপত্র নেয়া উচিত। অনেকে মিনায় বড় আকারের ট্রলি ব্যাগ নিয়ে যান । বেকপ্যাক থাকলে ওটা পিঠে ঝুলিয়ে
সরাসরি জামারাতে কংকর মারতে যাওয়া যায়। কিন্তু বড় ট্রলি ব্যাগ নিয়ে জামারাতে যাওয়া যায়না। তাই মিনায় বড় ট্রলি ব্যাগ নেয়াটা ঠিক নয়।
মসজিদুল হারামে দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যাওয়া ও তাওয়াফ করার সময় জায়নামাজ, ছাতা, পনির বোতল ও পায়ের স্যান্ডেল ইত্যাদি রাখার জন্য স্ট্রিং ব্যাগ অপরিহার্য্য(ছবি)। জিদ্দা এয়ারপার্টে নামার পর সৌদি মোয়াল্লেম বাংলাদেশী পাসপোর্ট জমা নিয়ে নেয়। অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট হোটেলের সুটকেসে তালা মেরে রাখলেই চলে। হোটেল কক্ষ বেশ নিরাপদ মনে হয়েছে। এছাড়া মূল্যবান জিনিসপত্র রাখার জন্য হোটেল রুমে সেফও রয়েছে। Foldable Prayer Mat with Backrest – মসজিদুল হারামের ভেতর পছন্দমত জায়গা পেতে হলে নামাজের দু’এক ঘন্টা আগে যেতে হয়। অনেক সময় আছর নামাজ পড়তে গেলে ইশার নামাজ শেষ করে তবেই হোটেলে ফেরা হয়। কোমর ব্যথার কারণে দীর্ঘক্ষন মাটিতে বসে থাকা আমার জন্য খুবই কষ্টকর। তাই এই ম্যাটটি আমার খুবই কাজে লেগেছে। এটা মক্কার যে কোনো দোকানে ২০/২৫ রিয়ালে কিনতে পাওয়া যায়। অনেকে অবশ্য ছোট ফোল্ডিং চেয়ারও নিয়ে যান। যারা কোমর কিংবা পিঠের ব্যথায় ভুগছেন তাদের জন্য এই ধরনের ম্যাটটি খুবই উপকারী। অবশ্য মদিনায় মসজিদ-এ-নববীতে কর্তৃপক্ষ মসজিদের বিভিন্ন স্থানে বসার জন্য সারি সারি ফোল্ডিং চেয়ার ঝুলিয়ে রাখেন

MONEY
অস্ট্রেলিয়া থেকে যাবার সময় বেশ কিছু ক্যাশ রিয়াল (৪,০০০) সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম। কেনা কাটা, বাইরে খাওয়া দাওয়া ইত্যাদির জন্য ব্যাংক কার্ডের চেয়ে ক্যাশ ব্যবহার করাটাই শ্রেয়। μেডিট কার্ড ব্যবহার করলে ২.৫% সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। আমি সাথে WISE International Debit Card নিয়ে গিয়েছিলাম। এটা দিয়ে বিশে^র যে কোনো দেশে ATM বুথ থেকে স্থানীয় কারেন্সি তোলা যায় এবং কেনাকাটাতে ডেবিট কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা যায়। ওয়াইজ কার্ডের কনভারসন রেট মানি এক্সচেঞ্জের চেয়ে ভালো (1A$=2.47 Riyal). ১০ ডলার দিয়ে অনলাইনে ওয়াইজ কার্ড অর্ডার করতে হয়। প্রয়োজনমত মূল ব্যাংক একাউন্ট থেকে ডলার পাঠিয়ে ওয়াইজ একাউন্ট টপ-আপ করলেই হয়।

MAT & AIR PILLOW মুুজদালিফায় রাত্রি যাপনের জন্য ম্যাট ও বালিশ মক্কার যে কোনো দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। একটা চাদর এবং AIR PILLOW নেয়া যেতে পারে। চাদরটা মিনা ক্যাম্পে গায়ে দেয়ার জন্যও কাজে লাগে।

SIM Card মক্কার হোটেলে লাগেজ রেখে প্রথম কাজ হচ্ছে মোবাইল ফোনের জন্য একটি সিম কার্ড কেনা। জিদ্দা বিমান বন্দরে সিম কার্ড কেনার সময় থাকেনা। হোটেলের আশে পাশে রাস্তার উপর রয়েছে বিভিন্ন ফোন কোম্পানীর SIM Card
Kiosk. তিনটি বহুল প্রচলিত সিম কার্ড হচ্ছে – STC (Saudi Telecom), Mobily and Zain. তবে নেটওয়ার্ক কাভারেজের বিবেচনায় STC ই সেরা। STC’র সাওয়া ডাটা প্যাকেজটি বেশ জনপ্রিয়।

MISCELLENEOUS

Waist or shoulder bag? বিমান ও বাসে চলাচলের সময় টাকা, পাসপোর্ট ও অন্যান্য জরুরী জিনিসপত্র বহন করার জন্য Waist ব্যাগের চেয়ে shoulder ব্যাগ আমার কাছে অনেক বেশী কার্যকর মনে হয়েছে।
Digital scale- লাগেজ ওজন করার জন্য ডিজিটাল স্কেল কাজে লাগে।
Footware –)আমি দুই ধরনের (Thong & Non Slip
Outdoor) স্যান্ডেল নিয়ে গিয়েছিলাম।
Portable Power Bank– হজের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে ফোনে চার্জ দিতে পাওয়ার ব্যাংকের প্রয়োজন হয়। 10000 MAh capacity পাওয়ার ব্যাংক হলেই চলে। মিনা ক্যাম্পের তাবুতে চার্জ দেয়ার জন্য সীমিত সংখ্যক পাওয়ার পয়েন্ট
রয়েছে। অনেকেই মাল্টিপল পাওয়ার বোর্ড নিয়ে যায় এবং ওখান থেকে ফোনে চাজর্ দেয়া যায়। তবে সাথে একটা কনভার্টার প্লাগ নিয়ে যাওয়া উচিত যা হোটেল
রুমেও কাজে লাগে। Dry Foods –)অস্ট্রেলিয়া থেকে খাবার খুব একটা নেয়ার দরকার নেই। প্রয়োজন হলে স্থানীয় সুপার মার্কেট ইরহ) Bin)
Dawood থেকে কেনা যায়। কিছু muesli bar নেয়া যেতে পারে।
উপরে বর্নিত অধিকাংশ জিনিসপত্র অনলাইনে কেনা যায়। Amazon কিংবা e-Bayতে দাম একটু চড়া তাই আমি Temuথেকেই কিনেছিলাম। কোনো সমস্যা হয়নি

GIFTS & ZAMZAM WATER

দেশে ফেরার পথে সবাই পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্য উপহার
কিনে থাকেন। কেনাকাটা মক্কাতেই করা উচিত। যদিও অনেকে বলেন মদিনায় জিনিসপত্র সস্তা। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম তা সঠিক নয়। মক্কায় কাপড়-চোপড়, বোরকার যেvariety তা মদিনায় খুঁজে পাওয়া যায়না। মক্কায় বেচাকেনা অনেক
বেশী হয় বলে জিনিসপত্রের দামও মদিনার চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম। তবে খেজুর মদিনা থেকেই কেনা উচিত।
জিদ্দা বিমান বন্দরে প্রত্যেক হাজি ১২ রিয়ালের বিনিময়ে ৫ লিটারের একটি জমজম পানির বোতল কিনতে পারেন। জমজমের বোতল লাগেজের সাথে বিনামূল্যে আনা যায়। খেজুর নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশানে তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। ওরা হজের ব্যাপারে জানে। তাই ডিক্লেয়ার করলে তেমন একটা দেখতেও চায়না। খোলা খেজুু রও আনা যায় তবে সেটা প্লাস্টিক ব্যাগে সিল করে আনলে ভালো।

এবার হজে কেনো এত মানুষ মারা গেল? জুন থেকে সেপ্টেম্বর, এই চার মাস হল সৌদি আরবের গ্রীষ্মকাল। বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় গড় তাপমাত্রা এই চার মাসেই সবচেয়ে বেশী (ছবি দেখুন)। জুন মাসের গড় তাপমাত্রা ২৯-৪৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস দেখালেও দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কখনো ৫০ ডিগ্রী অতিμম করে যায়। সমস্যা হল রাতের বেলাতেও তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রীর নীচে নামেনা ইসলামিক ক্যালেন্ডার চান্দ্র মাস অনুযায়ী হয় বলে হজের তারিখ গ্রেগরীয় বা ইংরেজী বছরের তুলনায় ১১ দিন ছোট
হয়। ফলে ইংরেজী ক্যালেন্ডারে হজের তারিখ প্রতি বছর পরিবর্তন হয়। সেই হিসাবে আগামী ৪ বছরের মধ্যে হজ পিছিয়ে গিয়ে এপ্রিল মাসে পড়বে। তখন হাজীদের এখনকার মত প্রচন্ড গরমের মধ্যে হজ করতে হবেনা। এতএব আগামী কয়েক বছরে যারা হজে যাবেন তাদের হিটস্ট্রোক থেকে সুরক্ষিত থাকার বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। প্রতি বছর ১১ দিন করে পিছিয়ে গিয়ে আনুমানিক ২০৫২ এবং ২০৮০ সালে আবারো হজ গ্রীষ্মকালে ফিরে আসবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে বৈশ্বিক উষ্ণতা ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য হজের সময় হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি পাঁচ গুন বেড়ে যাবে। তার মানে ভবিষ্যতে হজ করতে গিয়ে হাজীদের আরো বেশী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
অতীতে হজের মওশুমে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় বহু হাজীর প্রানহানি ঘটেছে। ১৯৯০ সালে ভীড়ের মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে সৌদি সরকারের হিসাব অনুযায়ী ১৪৬২ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পদদলিত হয়ে ৭৬৮ জনের মৃত্যু হয়। এর মাত্র দুু’সপ্তাহ আগে ১১ই সেপ্টেম্বর একটি ভ্রাম্যমান μেন ভেঙে পড়ে মসজিদুল হারামের কাছে ১১৮ জনের মৃত্যু হয়। আর এবছর প্রচন্ড গরমের কবলে পড়ে প্রায় ১৩০০ হাজীর মৃত্যু হয়েছে। তবে যে সব হাজী নিখাঁজ রয়েছে তাঁদের এই সংখ্যায় ধরা হয়নি। বেসরকারী হিসাবে এছরের মৃতের সংখ্যা সৌদি সরকারের হিসাব থেকে অনেক বেশী।
সরকারী ভাষ্য অনুযায়ী এবার যে সব হাজী মারা গিয়েছেন তাদের ৮৫% শতাংশ হলেন অনিবন্ধিত হজ যাত্রী অর্থাৎ
যারা অবৈধ উপায়ে হজে যোগ দিয়েছিলেন। হজের খরচ অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ও বয়সের কারণে অনেকে অবৈধ
উপায়ে হজ করার চেষ্টা করেন। অনেক অসৎ এজেন্সি মানুষকে মক্কায় আসলে হজ পারমিটের ব্যবস্থা করে দেবে বলে
প্রতিশ্রæতি দিয়ে হাজীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়। কিন্তু পরে তাদের আর দেখা মেলেনা।
অবৈধভাবে হজ করা বন্ধ করার জন্য জিলক্কদ ও জিলহজ এই দুই মাস যেসব বিদেশীরা ভিজিট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে যান তাদের জিদ্দা বিমান বন্দরে নামতে দেয়া হয়না। তারা কেবল মদিনা, রিয়াদ ও দাম্মামে যেতে পারেন।
তবে অনেকে হজের আগে ভিসিট ভিসা নিয়ে অন্য শহরে এসে হজের সময় বিভিন্ন পথ ধরে হজ স্থলে পৌছান। হজ পারমিট না থাকায় তাঁরা কোথাও নিবন্ধিত হতে পারেন না। এই ধরণের হজযাত্রীরা মিনা, মুজদালিফা কিংবা আরাফাতের কোথাও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু, খাবার ও পরিবহন সংμান্ত কোনো সুযোগ সুবিধা পাননা। কোনো প্রকারে মক্কায় পৌছানোর পর তাঁরা সেখানে খাওয়া-দাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করে নেন।

মিনা কিংবা আরাফাতের তাঁবু র ভেতরে কতজন হাজী থাকবেন তা আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। নিবন্ধিত হাজী নাহলে আরাফাত কিংবা মিনার তাঁবুতে প্রবেশাধিকার নাই। তবে অনেকে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও পরিচিতির কারণে তাঁবুতে জায়গা করে নেন।
আরব দেশের বহু মানুষ যাদের সামর্থ নাই তাঁরা অবৈধ উপায়ে হজ করতে আসেন। ভাষা ও কৃষ্টিগত মিল থাকায় অন্যান্য আরব দেশের নাগরিকরা খুব সহজেই স্থানীয় নাগরিকদের সাথে মিশে যেতে পারেন। উল্লেখ্য এবারে হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়া মৃত হাজীদের ৪৬ শতাংশই ছিলেন আরব দেশ মিসরের নাগরিক। এইসব হাজিদের অনেকেরই হজ পারমিট ছিলনা। ফলে তাঁরা হাজিদের জন্য নির্ধারিত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন।

অবৈধ উপায়ে হজ বন্ধ করার জন্য সৌদি সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ২০ লক্ষ মানুষের মধ্যে পারমিটবিহীন হাজীদের খুঁজে বের করা দু:সাধ্য কাজই বটে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি নিবন্ধিত হাজীকে ‘নুসুক’ আইডি কার্ড দেয়া হয় যা দেখে বৈধ হাজীদের সনাক্ত করা যায়। মক্কায় অবস্থানকালে অনেকবার রাস্তাঘাটে আমাদের নুসুক কার্ড চেক করা হয়েছে। এছাড়া জিদ্দা থেকে বাসে করে মক্কা ঢোকার সময় অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করার লক্ষ্যে হাজীদের বাস থামিয়ে কয়েকবার ব্যাপক চেক করা হয়। বিভিন্ন আবাসিক ভবনেও অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের উচ্ছেদ করে দেশে পাঠানো হয়। সৌদি নাগরিক যাদের হজ করার অনুমতি নাই তারা নিয়ম ভঙ্গ করলে জরিমানা করা হয় এবং বিদেশীদের জন্য পরবর্তী ১০ বছরে বা আজীবন সৌদি প্রবেশ নিষিদ্ধ করার বিধান রয়েছে। বৈধ হজ পারমিট ছাড়া হজ করা শরিয়ত মোতাবেক জায়েজ নয় জানা থাকার পরও মানুষকে অবৈধ উপায়ে হজ করা থেকে বিরত করা যাচ্ছেনা।
এবারের হজে প্রতিক‚ল আবহাওয়ার কারণে জিলহজ মাসের ১০ তারিখ অর্থাৎ কুরবানীর দিন বেশী হাজীর মৃত্যু হয়। এ সময় তাপমাত্রা ৫১.৮ ডিগ্রীতে উঠে যায় যা হাজীদের কাবু করে ফেলে। মুজদালিফা থেকে জামারাত, জামারাত থেকে মিনার পথে মৃত্যুর বিভীষিকা ছড়িয়ে পড়েছিল। মিনা ও আরাফাত ক্যাম্পে পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ থাকলেও মুজদালিফা থেকে জামারাত এবং জামারাত থেকে মিনায় ফেরার পথে পানির অভাব ছিল। ফলে সূর্যতাপ ও গরমের মধ্যে যথেষ্ট বিশ্রাম ছাড়া দীর্ঘ পথ হেঁটে মিনায় যাবার পথেই বেশীরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তবে ওই দিন যারা মিনায় না গিয়ে মক্কায় গেছেন তাঁরা বেঁচে যান। আমাদের মুয়াল্লেম ১০ই জিলহজ বড় শয়তানের প্রতিকী স্তম্ভে কংকর নিক্ষেপ করে আমদের মক্কার হোটেলে নিয়ে যান এবং আবার রাতে মিনা ক্যাম্পে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এ নিয়ে প্রথমে একটু মনক্ষুন্ন হলেও আমাদের মুয়াল্লেমের সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল তা পরে বুঝতে পারি।
আরাফাত থেকে মুজদালিফার দূরত্ব হচ্ছে আনুমানিক ৮ কিলোমিটার আর মুজদালিফা থেকে মিনার দুরত্ব হচ্ছে ৫ কিলোমাটার। অন্যদিকে মিনা থেকে জামারাতের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। মিনা ক্যাম্প ও মুজদালিফায় একজন
হাজীর তাঁবুর অবস্থানের উপর এই দুরত্ব কম-বেশী হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর তুলনামূলক অবস্থান বুঝার জন্য
একটি ম্যাপ দিলাম।
ম্যাপ থেকে দেখা যায়, আরাফাত থেকে মুজদালিফা কিংবা মিনা যাবার জন্য পরিবহন না থাকলে হাজীদের প্রচন্ড গরমের মধ্যে ১০-১৩ কিলোমিটার অতিরিক্ত হাঁটতে হয়। হায়াদ্রাবাদের এক হাজী জানালেন তিনি প্রায় ৪০ কিলোমিটার হেঁটেছেন। আমার মোবাইলে ফোনের স্টেপ কাউন্টারে দেখলাম ওই দিন আমাকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে। আরাফাত থেকে মিনা ক্যাম্প পর্যন্ত বাস সার্ভিস থাকায় আমাদের তুলনামূলকভাবে কম হাঁটতে হয়েছে।

আরাফাতে অবস্থানের পর দিন মুজদালিফা থেকে ফজরের নামাজের শেষে প্রতিকী শয়তানের স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপের জন্য হাজীরা জামারাতের দিকে যাত্রা শুরু করে। দিনের আলো ফুটে উঠে যখন গরম পড়তে শুরু করে তখন হাজীরা খাবার জন্য পানি পাননি এবং রাস্তায় ছিলনা কোনা ছায়া। রাস্তার আশে পাশে কিছু ধিঃবৎ শরড়ংশ থাকলেও তাতে পানি সরবারাহ ছিলনা। পথে সময় সময় হাজীদের উপর পানি স্প্রে করা হলেও তা গরম কাটাতে সাহায্য করেনি। জামারাতে অনেক হাজীদের ৩ কিংবা ৪ তলাতে উঠিয়ে দেয়া হয়। এই পথে হাজীদের পাহাড় বাইতে হয়েছে এবং জামারাতের যাবার রাস্তাও ছিল অনেক দীর্ঘ। ফলে অনেক হাজী ভয়াবহ কষ্টের মধ্যে পড়েন। জামারাতে কংকর নিক্ষেপের তৃতীয় দিন আমাদের তিন তলায় তুলে দেয়া হলে এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী ক্লান্তি ও অবসাদে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে আমাদের কাছে হাইড্রালাইট ও পর্যাপ্ত পরিমানে পানি ছিল বলে সে যাত্রায় আমরা কংকর নিক্ষেপ সম্পন্ন করতে সমর্থ হই। আমাদের ক্যাম্পে প্রত্যক্ষদর্শী হাজীদের কাছে শুনেছি পানির অভাবে হাজীদের কষ্টের কথা। তারা দেখেছেন রাস্তার পাশে ফুটপাতে অসংখ্য হাজীদের অজ্ঞান হয়ে ও মৃত পড়ে থাকতে।
হজের সময় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভীড় নিয়ন্ত্রনের কৌশল দেখে অবাক হয়েছি। কাউকে কোনো অবস্থায় রাস্তায় থামতে দেয়া হচ্ছিলনা। মানুষ যখন অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছিল তখন অনুনয় বিনয় করার পরও তাদের কোথাও বিশ্রাম নিতে দিচ্ছিলনা পুলিশ। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ হঠাৎ করে ব্যরিকেড দিয়ে রাস্তা আটকে দিচ্ছিল, ফলে হাজীরা অপ্রয়োজনীভাবে দীর্ঘ পথ হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন। মানুষ যখন একটু আশ্রয়ের জন্য হাঁসফাঁস করছিল তখন পুলিশ তাদের সাথে কর্কশ ব্যবহার করছিল। অসুস্থ মানুষের সংখ্যার তুলনায় প্যারামেডিক্স ও অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। ফলে হাজিরা পর্যাপ্ত সেবা পাননি। অ্যাম্বুলেন্স ডাকার ৩০ মিনিটের মধ্যেও অ্যামবুল্যান্সের দেখা মেলেনি। এভাবে প্রয়োজনীয় জরুরী চিকিৎসার অভাবে বহু হাজির মৃত্যু হয়েছে।
হজ হচ্ছে বিশে^র প্রায় ৭০টি দেশের ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মহা মিলনমেলা। অথচ এমন একটি আর্ন্তজাতিক সমাবেশ
নিয়ন্ত্রণের ভার যাদের উপর দেয়া হয়েছে তারা আরবী ছাড়া কোনো ভাষাই বুঝেনা। এমনিক রাস্তা-ঘাট ও ক্যাম্পের অবস্থানও জানেনা। তারা মানুষকে কিভাবে পথ দেখাবে? জামারাত থেকে ক্যাম্পে ফিরবার সময় অনেকেই পথ হারিয়ে ফেলেন। আমার এক কাতার প্রবাসী বাংলাদেশী বন্ধু মিনা ক্যাম্প খুঁ জে পাচ্ছিলেন না। উনি আরবী ভাষায় পারদর্শী কিন্তু তবুও পুলিশের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাননি। পুলিশের সোজা সাপ্টা উত্তর হচ্ছে – আমরা জানিনা। সত্যি বলতে কি সৌদি আরব হজের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য বহু পদক্ষেপ নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু দু:খজনকভাবে সেগুলো কার্যকর ও যথেষ্ট নয়।
জামারাতে গিয়ে একজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান হাজীয়ানের মুখে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা শুনে শিউরে উঠি। জামারাতে যাবার পথে উনার স্বামী অসুস্থ পড়লে হুইল চেয়ার ঠেলে উনি স্বামীকে জামারাতে নিয়ে যান। স্বামীর হুইল চেয়ারটা এক পাশে রেখে উনি কংকর নিক্ষেপ করে এসে দেখেন তাঁর স্বামী নেই। পাগলের এদিক ওদিক খোঁজা- খুঁজির পর নিরাপত্তা বাহিনী তাঁকে পুলিশ স্টেশনে যেতে বলে। পুলিশ স্টেশনে গেলে স্বামীর ডেথ সার্টিফিকেট হাতে

ধরিয়ে দিয়ে তাকে বলা হয় উনার স্বামী মারা গেছেন এবং উনার দাফনও সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে কোথায় দাফন করা হয়েছে সেটা তারা বলতে পারেনি। ওই মহিলা অনেকটা উ™£ ান্তের মত স্বামীর শেষ ঠিাকানা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। মানুষ বড় অংকের অর্থ দিয়ে হজ করতে যান। সেই অর্থ ব্যয় করে হজের সার্বিক ব্যবস্থাপনা আরো সুন্দর ও উন্নত করা সৌদি সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। হজ্জ করতে গিয়ে যারা মুত্যু বরণ করেছেন তাঁরা অবশ্যই সৌভাগ্যবান। কিন্তু বৈধ কিংবা অবৈধ যে ধরণের হাজিই হোক না কেন অবহেলা কিংবা অব্যবস্থাপনার জন্য কোনো মৃত্যু মেনে নেয়া যায়না।
সরকারী হিসাব অনুযায়ী ২০০৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হাজীদের সংখ্যার একটি গ্রাফ দেয়া হল। দেখা যাচ্ছে ২০১২ সালে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ হজ করেন (৩,১৬১,৫৭৩)। হাজীদের সংখ্যা কোভিডের জন্য কমে ২০২০ সালে মাত্র এক হাজারে নেমে আসে। এরপর ২০২১ সালে ৫৮,৭৪৫ জন থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে প্রায় ১৮ লক্ষেরও বেশী হয়েছে। সবচেয়ে বেশী হাজী যায় ইন্দোনেশিয়া থেকে (২,২১,০০০) এরপর পাকিস্তান, আর বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে। তবে অবৈধ হাজীদের সংখ্যা যোগ করলে মোট হাজীর সংখ্যা সরকারী হিসাবের চেয়ে অনেক বেশী হবে। এদিকে উচ্চ মূল্যের জন্য বাংলাদেশের কোটা খালি পড়ে থাকলেও ইন্দোনেশিয়া, অষ্ট্্েরলিয়া,ইউরোপ ও বহু আরব দেশ থেকে হজ করতে ইচ্ছুক মুসলিমদের সংখা বেড়েই চলেছে। হাজীদের কোটা বৃদ্ধির জন্য ওই দেশগুলো সৌদি সরকারকে চাপ দিচ্ছে।

ধরিয়ে দিয়ে তাকে বলা হয় উনার স্বামী মারা গেছেন এবং উনার দাফনও সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে কোথায় দাফন করা হয়েছে সেটা তারা বলতে পারেনি। ওই মহিলা অনেকটা উ™£ ান্তের মত স্বামীর শেষ ঠিাকানা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। মানুষ বড় অংকের অর্থ দিয়ে হজ করতে যান। সেই অর্থ ব্যয় করে হজের সার্বিক ব্যবস্থাপনা আরো সুন্দর ও উন্নত করা সৌদি সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। হজ্জ করতে গিয়ে যারা মুত্যু বরণ করেছেন তাঁরা অবশ্যই সৌভাগ্যবান। কিন্তু বৈধ কিংবা অবৈধ যে ধরণের হাজিই হোক না কেন অবহেলা কিংবা অব্যবস্থাপনার জন্য কোনো মৃত্যু মেনে নেয়া যায়না।
সরকারী হিসাব অনুযায়ী ২০০৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হাজীদের সংখ্যার একটি গ্রাফ দেয়া হল। দেখা যাচ্ছে ২০১২ সালে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ হজ করেন (৩,১৬১,৫৭৩)। হাজীদের সংখ্যা কোভিডের জন্য কমে ২০২০ সালে মাত্র এক হাজারে নেমে আসে। এরপর ২০২১ সালে ৫৮,৭৪৫ জন থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে প্রায় ১৮ লক্ষেরও বেশী হয়েছে। সবচেয়ে বেশী হাজী যায় ইন্দোনেশিয়া থেকে (২,২১,০০০) এরপর পাকিস্তান, আর বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে। তবে অবৈধ হাজীদের সংখ্যা যোগ করলে মোট হাজীর সংখ্যা সরকারী হিসাবের চেয়ে অনেক বেশী হবে। এদিকে উচ্চ মূল্যের জন্য বাংলাদেশের কোটা খালি পড়ে থাকলেও ইন্দোনেশিয়া, অষ্ট্্েরলিয়া,ইউরোপ ও বহু আরব দেশ থেকে হজ করতে ইচ্ছুক মুসলিমদের সংখা বেড়েই চলেছে। হাজীদের কোটা বৃদ্ধির জন্য ওই দেশগুলো সৌদি সরকারকে চাপ দিচ্ছে।
হজের সময় হাজীদের দেখভাল করা ও দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রতিবছর ৩-৪ হাজার হজ অফিসার সৌদি আরবে পাঠানো হয়। বিশেষ পোশাক পরিহিত এসব কর্মকর্তারা সর্বদা হাজীদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন। মিয়ানমারের মিনা ক্যাম্পেও আমি এ ধরনের গাইড দেখেছি। তবে বাংলাদেশী হাজীদের সাহায্য করার জন্য সাথে কোনো হজ কর্মকর্তা চোখে পড়েনি। স্থানীয় পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনীকে হজ ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করার জন্য সৌদি সরকার বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেকের দল আহŸান করতে পারে। যে কোনো মুসলিম দেশ এতে সাড়া দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
হজ থেকে সৌদি সরকার প্রতি বছর প্রায় ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে যা সৌদি জিডিপি’র ২০
শতাংশ। এছাড়া সারা বছর উমরা থেকে অতিরিক্ত আয়ের পরিমান ৪-৫ বিলিয়ন ডলার। তাই হাজীদের সুরক্ষার জন্য
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সৌদি সরকারের সমস্যা কোথায়?
দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করলেও অবশেষে এই বছর (২০২৪) আমার হজ করার সৌভাগ্য হয়। আগে উমরা করেছি। কিন্তু সত্যি বলতে কি হজে না গেলে হজের ব্যাপ্তি ও আধ্যাত্মিকতার মানে বোঝা অনেকটা অসম্ভব। মক্কায় যাবার পরের দিনগুলো যেনো কেটেছে ঘোরের মধ্যে। মনে হচ্ছিল যেনো অন্য গ্রহালোকে বসবাস করছি। সবাই পাল্লা দিয়ে ছুটছে কা’বার পানে। অন্য কোনো দিকে তাকানোর যেনো হুশ নেই কারো। সবাই চেষ্টা করছে কি করে বেশী বেশী সাদাকা করা যার, নেকী কামানো যায়। অনেকে দেদার দান-খয়রাত করছিলেন। ভালো কাজ করার জন্য যেন চলছিল প্রতিযোগীতা। কেউ জায়নামাজ, খাবার, ফোল্ডিং চেয়ার ও পানি ইত্যাদি কিনে মানুষের মধ্যে বিতরণ করছিলেন।

দেখলাম বাসের উঠার সময় অনেকে নিজে না উঠে আগে অন্যকে উঠার সুযোগ দিচ্ছে। মনে হচ্ছিল যেন এক নতুন পৃথিবী দেখছি। আহা! পৃথিবীটা যদি চিরকাল এমন থাকতো? তবে এর ব্যাতিμমও চোখে পড়েছে। হজের অর্থই হল ত্যাগ স¦ীকার করা, নিজের আগে অন্যের চাহিদাকে প্রাধান্য দেয়া, মানুষের সেবা করা, কোনো রকমের বিতর্কে জাড়িয়ে না পড়া ইত্যাদি। কিছুু সংখ্যক মানুষকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিতর্র্কে জড়িয়ে পড়তে দেখলাম। বিশেষ করে তোয়াফের সময় মারমুখী মানসিকতা থেকে যদি আমরা বেরিয়ে আসতে পারতাম তাহলে তাওয়াফ করাটা অনেক স্বস্তিকর হত। আল্লাহ আমাদের প্রকৃত হজের সরূপ সন্ধান করার তৌফিক দিন। আমিন